নিজস্ব প্রতিবেদক
কারাগারে যেমন কাটছে খালেদা জিয়ার দিন
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এক মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল। পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ১৭ একর জায়াগার ওপর নির্মিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের একমাত্র আসামি তিনি। কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের ৫৫৮ দিন পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নতুন করে বন্দি হিসেবে পায় বেগম খালেদা জিয়াকে। পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে ‘বিশেষ কারাগার’ ঘোষণা দিয়ে সেখানে রাখা হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এক মাস কারাগারে থাকায় খালেদা জিয়া অন্য এক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। যা তার স্বাভাবিক জীবনের বিপরীত। কারাগারে এক মাস ধরে বন্দি বেগম খালেদা জিয়া কীভাবে দিনাতিপাত করছেন, তার ওপর ভিত্তি করেই এই প্রতিবেদন।
কারা সূত্র বলেছে, বেগম খালেদা জিয়ার জন্য একটি টিভি বরাদ্দ হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। কারণ তিনি বিটিভি দেখবেন না। তবে শুরুর দিকে স্বাভাবিক জীবনের মতোই গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকলেও এখন তার সেই অভ্যাস অনেকটাই পাল্টে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী, কারাগারে রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যেই তার কক্ষের বাতি নিভে যায়। তাই রাত জাগার আর সুযোগ না থাকায় তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। শেষ রাতের দিকে জেগে ওঠেন। ফজরের নামাজ পড়েন। এরপর ফের ঘুমান। এরপর ঘুম থেকে ওঠে সকালের নাস্তা সারেন। তার সকালের নাস্তা রুটি-সবজি। সকালের ঘুম থেকে মাঝে-মধ্যে বেশ দেরিতে ওঠেন। তখন আর সকালের নাস্তা খান না। একবারে দুপুরে গোসল সেরে খাবার খান। মেন্যুতে থাকে তার পছন্দের পাবদা, শিং, রুই মাছ এবং খাসির মাংস। তিনি কখনো গরুর মাংস খান না। বিকেলে কিছু সময় ডে-কেয়ার সেন্টারের বারান্দায় পায়চারি করেন।
কারা সূত্র জানায়, কারাগারের সব নিয়ম মেনে চলছেন খালেদা জিয়া। তাকে কোনো বিষয় নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের অনুরোধ করতে হয় না। অধিকাংশ সময় চুপচাপই থাকেন। নামাজ পড়েন, কুরআন ও পত্রিকা পড়ে সময় কাটান। সঙ্গে থাকা গৃহকর্মী ফাতেমাসহ দায়িত্বরত কারা মহিলা স্টাফদের সঙ্গে আলাপ করেই সময় কাটান। কারাবিধি অনুযায়ী, সরবরাহকৃত খাবার দেওয়া হচ্ছে তাকে।
তার প্রতিদিনের খাবারের জন্য বাজারের দায়িত্ব পালন করছেন ডেপুটি জেলার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। প্রতিটি খাবার কারা চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষার পর বেগম খালেদা জিয়ার কাছে পাঠানো হয়। খাবার রান্না করার দায়িত্ব পালন করছেন দুজন পাচক। গৃহকর্মী ফাতেমাকে কারাগারে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কারাগারের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে একজন চিকিৎসক এবং একজন ফার্মাসিস্ট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। তার শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট স্বাভাবিক। একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি হিসেবে সব সুবিধাই তিনি পাচ্ছেন।
খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে কারা বিধি অনুসারে ভিআইপি বন্দি রাখার জন্য পুরনো কারাগারের ‘ডে-কেয়ার’ সেন্টারের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির ডান পাশের দুটি কক্ষ থাকার উপযোগী করে তোলা হয়। এর মধ্যে একটি কক্ষে লাগানো হয় নতুন টাইলস, সিলিং ফ্যান ও এসি। বসানো হয় খাট, চেয়ার ও টেবিল। বিটিভির লাইনও সংযোগ দেওয়া হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি ডিভিশন পাওয়ার পর সেখান থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে ডে-কেয়ার সেন্টারে নেওয়া হয়। তাকে পড়ার জন্য একটি দৈনিক পত্রিকা দেওয়া হয়।
কারা সূত্রে জানা যায়, শুরুর দিকে পুরনো অভ্যাস অনুযায়ী, শেষ রাতে অর্থাৎ ৩টার দিকে ঘুমাতে গেলেও এখন আর রাত জাগছেন না। জোহরের নামাজের পর নিয়মিত অজিফা পড়েন। ডে-কেয়ার সেন্টারের চেয়ারে বসেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটে তার। রাতে খালেদা জিয়ার কক্ষেই ফাতেমা রাতযাপন করেন।
কারাগারে যাওয়ার পর একবার বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে পাঁচজন সিনিয়র আইনজীবী। এর বাইরে তিন দফায় বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তার বড় বোন সেলিনা হোসেন বিউটি ও তার ছেলে, বড় ভাইয়ের স্ত্রী, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও তাদের ছেলে অভিক এস্কান্দার। এছাড়াও একবার খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর শাশুড়ি দেখা করেছেন।
"