নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘বড় সম্ভাবনা’ দেখছেন এডিবি প্রেসিডেন্ট
চীন বা ভারতের মতো ‘বড় অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার’ সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও। গতকাল বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এডিবির প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন। এদিকে একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্মূলে মিয়ানমার সরকার পরিকল্পিত গণহত্যা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী তিন নারী। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির ঘুরে আসা ইরানের শিরিন এবাদি, ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান এবং যুক্তরাজ্যের মরিয়েড মুগুয়ার এদিন গণভবনে তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, মিয়ানমারকে এর দায় নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের তথ্য তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, এডিবির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, চীন ও ভারতের মতো বড় অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার জোর সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে। এডিবির প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, অনেক দেশই এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে এডিবির কাজ করে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তাকেহিকো নাকাও এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বলেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
মানবিক কারণে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি টেকনাফের পরিবেশ ও জনমিতির ওপর এর বিরূপ প্রভাবের কথাও প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তুলে ধরেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসায় তাকেহিকো নাকাওয়ের বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে উন্নয়নই তার সরকারের মূল লক্ষ্য।
যোগাযোগের উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন। আর শিক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিজ্ঞান চর্চায় জোর দিচ্ছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আজম ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নোবেল জয়ী তিন নারীর বৈঠকের বিষয়েও সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব।
ইহসানুল করিম বলেন, মরিয়েড মুগুয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যা দেখেছেন তাতে তারা গভীরভাবে শোকাহত। রাখাইনের ঘটনাকে গণহত্যা হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, এরপরও বিশ্ব স¤প্রদায় এখনো কীভাবে নীরব রয়েছে, তাতে তিনি বিস্মিত। মানবিক কারণে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তাকে ‘কাইন্ড মাদার’ হিসাবে বর্ণনা করেন ১৯৭৬ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া মুগুয়ার।
আরব বসন্তের দিনগুলোতে ইয়েমেনের বিপ্লবের প্রতীক হয়ে ওঠা সাংবাদিক ও অধিকার কর্মী তাওয়াক্কুল কারমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন, রাখাইনে যা ঘটছে তার দায় মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের যে খবর প্রচার মাধ্যমে আসছে তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহতা সেখানে ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন নোবেল বিজয়ী এই নারী।
আশ্রয় শিবির পরিদর্শনের সময় ১০০ নারীর সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন, ওই নারীরা মিয়ানমারে ধর্ষণের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ক্যাম্পের অধিকাংশ এতিম রোহিঙ্গা শিশুর অভিভাবককে হত্যা করা হয়েছে।
তাওয়াক্কুল কারমান বলেন, এটা জাতিগত নিধনের পরিকল্পিত সরকারি নীতি। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে এর বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।
২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইরানের শিরিন এবাদি এই গণহত্যার জন্য দায়ীদের আইনের আওয়তার আনার কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেন, সব মিলিয়ে ১০ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার যাতে ওই চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের নিজ ভ‚মিতে ফিরিয়ে নেয় সেজন্য আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার আহŸান জানান বাংলাদেশের সরকার প্রধান।
এ সময় গওহর রিজভী ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
"