শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম

  ২১ জানুয়ারি, ২০১৮

পুলিশের গাড়ি ও পোশাক পরে চাঁদাবাজি : এরা কারা?

‘পুলিশ পরিচয়ে চাঁদা দাবির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’

পুলিশ লেখা গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করেন তারা। পরেন পুলিশের পোশাকও। পুলিশের এমন বেশ ধারণ করে তারা হাজির হন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এরপর জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তার নাম দিয়ে চেয়ে বসেন চাঁদা। এই টাকা আবার পাঠাতে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম বিকাশ নাম্বারে। চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় থাকা এই চক্রটির খোঁজে তৎপর রয়েছে চট্টগ্রামের পুলিশ। এদিকে জনমনে প্রশ্ন, পুলিশের বেশধারী এরা করা? চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘পুলিশ পরিচয়ে চাঁদা দাবির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’

চট্টগ্রাম নগরের মোহরা নক্সাস শিল্প এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ফাবিহা ফুড প্রডাক্টস নামে একটি প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্য তৈরির প্রতিষ্ঠান। গত ১৫ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি ভ্যানে চড়ে দুজন লোক সেখানে যান। গায়ে ছিল তাদের পুলিশের পোশাক। তাদের বহনকারী ভ্যানের সামনে ও পাশে লেখা ছিল ‘পুলিশ’। এদের মধ্যে একজন নিজেকে পরিচয় দেন চান্দগাঁও থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই)। এবং ফাবিহা ফুড প্রডাক্টসের মালিক রবিউল হাসানকে সিএমপির কথিত এডিসি মাহবুবুল আলমের সঙ্গে তাদের মোবাইলে কথা বলার জন্য বলেন। এ সময় মোবাইলে কথিত এডিসির সঙ্গে কথা বলেন রবিউল হাসান। তখন এডিসি প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য রবিউলকে বলেন। কারণ জানতে চাইলে এডিসি জানান, ওই এলাকায় যারা ব্যবসা করে তাদের সবাইকে এভাবে টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। তাকে টাকা দিলে সকল সমস্যার সমাধান করে দেবেন এবং পুলিশ বা অন্য কেউ আর হয়রানি করবে না। টাকা না দিলে রবিউলকে ব্যবসা করতে দেবে না পুলিশ। পরে রবিউলের মোবাইল নম্বর তিনি লিখে নেন। পাশাপাশি রবিউলকে ০১৭৯৭৭৭০০৩১ নাম্বারে বিকাশে টাকা পাঠাতে বলা হয়। টাকা না দেওয়ায় ০১৭১৯১৮০৩৭৫ ও ০১৭৭৮৭৫৫৬৮১ নাম্বার থেকে কল দিয়ে ৫০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে হুমকি দিতে থাকে চক্রটি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রবিউল হাসান বলেন, ‘বিএসটিআইসহ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্য তৈরির প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছি। পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিদের টাকা না দেওয়ায় ব্যবসার ক্ষতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় আমি ও আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা আতঙ্কে আছি।’

পুলিশ পরিচয়ে চাঁদা দাবির সঙ্গে জড়িতদের সন্ধানে ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন; তিনি বলেন, ‘এমনও হতে পারে, জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে অপরাধীরা মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোন করে বলেছে যে, ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মালিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিও। তখন সত্যিকারের জুনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে কথা বলিয়ে দেয়। আবার অপরাধীরা পুলিশের বেশধারণ করেও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখেছি, চক্রটির ব্যবহার করা মোবাইল নাম্বারগুলোর অবস্থান ঢাকায়।’

এদিকে রবিউলের এই ঘটনাটি ফেসবুকে তুলে ধরে পুলিশ কর্মকর্তাদের সহায়তা চান তার ভাগিনা মাসুদ ফরহান অভি। ১৫ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় পোস্ট করা ওই স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে একই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার কথা জানান সঞ্জয় অধিকারী নামে চাঁদপুরের একজন বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘১৫ জানুয়ারি একজন এসআই আসে আমাদের ফ্যাক্টরিতে। ০১৭১৯১৮০৩৭৫ নাম্বার থেকে আমার মালিকের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। জানানো হয়, পরিবেশ অধিদফতর থেকে অভিযোগ আছে। আমরা যদি তার সঙ্গে দেখা করি তাহলে ঠিক আছে। নয়তো আমাদের এক লক্ষ টাকা জরিমানা করবে।’

সঞ্জয় অধিকারী বলেন, ‘এরপর ফেসবুকে ওই নাম্বার দিয়ে যখন সার্চ করলাম তখনই মাসুদ ফরহান অভির পোস্ট পেলাম আর বুঝে গেলাম সব। এরপর তারা পালিয়েছে। যাওয়ার সময় বলে যায় আমাদের মাফ করে দিয়েছে। যাতে আমি কাউকে না বলি।’

শুধু এই দুটি ঘটনা নয়; দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ লেখা গাড়ি ও পোশাক নিয়ে চক্রটির চাঁদাবাজিতে নামার আরো তথ্য পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তাদের ব্যবহার করা মোবাইল নাম্বার থাকছে অভিন্ন। গত বছরের ১৫ আগস্ট সজিব সাইফুল নামে ঢাকার শ্যামপুরের একজন বাসিন্দা এই চক্রের ব্যবহার করা মোবাইল নাম্বার উল্লেখ করে পুলিশ পরিচয়ে চাঁদা দাবির আরো একটি ঘটনার কথা তুলে ধরেন ফেসবুকে। সেখানে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি নাজমুল সুমন লিখেছেন, ‘পুরোটাই ভুয়া’। ওই স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে ভুক্তভোগী সজিব সাইফুল পরে লিখেছেন, সেদিন কারা তার বাসায় গিয়েছিল তা খুঁজে বের করেন পুলিশের ওই এলাকার ডিসি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলেও তাকে জানান ওই ডিসি।

এদিকে চক্রটির ব্যবহার করা একই নাম্বার তুলে ধরে আলমগীর নূর নামে চট্টগ্রামের একজন বিএনপি নেতা গত ১৮ জানুয়ারি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাকলিয়া থানার এএসআই রুহুল আমিন ও কথিত এডিসি মেহবুব পরিচয়ে লাখ টাকা চাঁদা দাবি...।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist