সংসদ প্রতিবেদক

  ০৮ জানুয়ারি, ২০১৮

সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ

সরকারের লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ

জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার দারিদ্র্যনিরসন এবং বৈষম্য দূর করে আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প হিসেবে ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’ এবং মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে দুটি ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করে। এ পরিকল্পনার মৌলিক উদ্দেশ্য হলো উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে উন্নীতকরণ।” গতকাল রোববার দশম জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

একই সঙ্গে জাতীয় সংসদকে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু অভিহিত করে সরকারি ও বিরোধী দলসহ সবাইকে সম্মিলিত ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দেওয়া ভাষণে তিনি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বর্ণনা দেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকার সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে অভূতপূর্ব গতিশীলতা সঞ্চালনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও আধুনিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার ঐকান্তিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিকেল ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। গতকাল সংসদের মুলতবি বৈঠক শুরুর পরে স্পিকার রাষ্ট্রপতির আগমনের ঘোষণা দিলে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদ্যদল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে তাকে সম্ভাষণ জানান। সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতির ঢোকার পর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। সংসদে তার জন্য স্পিকারের ডান পাশে লাল রঙের গদিসংবলিত চেয়ার রাখা হয়।

স্পিকারের ঘোষণার পর লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্ত সার পড়া শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় তার মূল বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিনকে অনুরোধ জানান আবদুল হামিদ। ভাষণে রাষ্ট্রপতি অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ সম্পূণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। একাত্তরের শহীদদের নিকট আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ রয়েছে। আসুন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে মত ও পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এবং বর্তমান সরকারের ওপর দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দিনবদলের সনদ-‘রূপকল্প-২০২১’ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্নমধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এখন জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে ২০৪১ সালের দিকেÑবিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার মানসে।

দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী পলাতক খুনিদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলমান আছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলাটি বিচারিক আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর্যায়ে আছে। জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিভাগ ও জেলাপর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।’

আবদুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং দেশীয় শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। রফতানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়ন ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে যুগোপযোগী ‘রফতানিনীতি ২০১৫-১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রতিটি স্তরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে সবক্ষেত্রে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান কমিশন এ পর্যন্ত কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, দশম জাতীয় সংসদের দুটি উপনির্বাচন, পাঁচটি পৌরসভা ও চারটি উপজেলা পরিষদ এবং ১৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনসহ বেশকিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের যে পথ আমরা পারি দিচ্ছি; তা আমাদেরকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশ্বসভায় ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামাজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি সম্মানজনক অবস্থানে সমাসীন হয়েছে এবং অচিরেই একটি উন্নত দেশ হিসেবে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবে। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ণ এবং সমাজের সবস্তরে প্রত্যক্ষ জন-সম্পৃক্তির মধ্য দিয়ে আমরা নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ একটি আদর্শ সমাজভিত্তিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist