আহমদ আবদুল্লাহ

  ২৩ জুলাই, ২০১৭

পরিচর্যা

শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ

আমাদের চারপাশে মানুষ্য সৃষ্ট বা প্রকৃতির যেসব বস্তু কিংবা জিনিস রয়েছে এর সমষ্টিকে আমরা পরিবেশ বলতে পারি। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে নিয়েই হয় সমাজ। মানুষ সামাজিক জীব, তাই সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে এরা ভালোবাসে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে পাঁচটি দিক পরিলক্ষিত। যেমন-ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন ও আন্তর্জাতিক জীবন।

উল্লেখিত আলোচনার মাধ্যমে যে কথাগুলো ফুটে ওঠে, তাহলো সামাজিক পরিবেশ এবং রাষ্ট্র যাদের নিয়ে গঠিত তাদের মূল হলো শিশু। অথচ এই শিশুর জীবন সুসংগঠিত করতে আমরা কতটুকু ভূমিকা রাখছি? আমরা জানি, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। প্রতিটি শিশু তার নিজস্ব প্রতিভা নিয়ে জন্মায় এবং উপযুক্ত পরিচর্যায় তার সে প্রতিভা ডালপালা ছড়িয়ে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হয়। তাই কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর অন্তরে।’ অন্যদিকে অসুস্থ প্রতিকূল পারিপার্শ্বিক আবহ শিশুর প্রতিভাকে ধ্বংস করে। পরিবেশগত ভিন্নতার জন্য একই মেধাসম্পন্ন দুটি শিশুর একজন হয় সমাজের বরণীয় বুদ্ধিজীবী, অন্যজন হয় খুনি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী। অনুকূল পরিবেশে শিশুর মেধা ও সৃজনশীলতা ভালোর দিক পরিচালিত হয়। মূলত একটি শিশু সঠিক পরিচালনা ও দিক-নির্দেশনার মাঝে বড় হলে সে হতে পারে একজন গুণী ব্যক্তিত্ব।

শিশুর সঠিক বিকাশের লক্ষ্যে তার শারীরিক, মানসিক ও আবেগিক বিকাশের জন্য পরিবারের অভিভাবকদের বিশেষ করে মা-বাবার ভূমিকা প্রধান। শিশুর প্রতিভা সঠিক বিকাশের ক্ষেত্রে তার মানসিকতা, চাহিদা, মেধা, কোনো কিছু গ্রহণ করার ক্ষমতা, ঝোঁক বা প্রবণতার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে পড়াশোনার জন্য অতিমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করেন। এ চাপ যুগপৎ শারীরিক ও মানসিক হয়ে পড়ে। এ ছাড়া আছে নানা রকম আদেশ নিষেধের দেয়াল। কত না বিধি-নিষেধ ও কড়াকড়ি আরোপিত হয় শিশুর ওপর। সে সঙ্গে শারীরিক নির্যাতনও আছে। অনেক পরিবারে এমনও দেখা গেছে, সংসারের কনিষ্ঠ সদস্যের ওপর সবার সমান কর্তৃত্ব ও শাসন চলে। এতে করে শিশুর মাঝে একটা অসহায়বোধ কাজ করে। যা পরবর্তীতে তাকে দুর্বল মানসিকতাসম্পন্ন বা ভীতু প্রকৃতির করে তোলে অথবা করে তোলে বিদ্রোহী।

কোনো কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারে দেখা গেছে, বাচ্চাদের শাসন করার জন্য হাতের কাছে বেত রাখা হয়। রোজ সন্ধ্যেবেলা বাচ্চাদের গৃহশিক্ষকদের পড়তে দিয়ে অভিভাবকরা পড়শিদের বাসায় খোশগল্পে মেতে ওঠেন। এদিকে গৃহশিক্ষক চলে যাওয়ার পর অভিভাবকরা ফিরে এসে দেখেন, বাচ্চাদের ভেতর মারামারি, হাতাহাতি, দুষ্টুমি, হইচই শুরু হয়ে গেছে। অভিভাবকরা নিষ্ঠুরভাবে শাস্তি দিয়ে এই হইচই থামান। ভবিষ্যতে দেখা যাবে, এসব পরিবারের সন্তানরা বিপথগামী হয়েছে, হয়েছে সন্ত্রাসী। কেননা অতিরিক্ত শাসনে যেমন শিশুর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, তেমনি আবার বিত্তবান পরিবারের লাগামহীন শাসনহীন সন্তানরাও অঢেল বিলাসিতার ফলে হয় যথেচ্ছাচারী ও বিপথগামী।

উচ্চবিত্ত পরিবারের অভিভাবকদের মধ্যে ভালোবাসাহীন সম্পর্কও অনেক সময় সন্তানদের যথেচ্ছাচারী ও বেপথু জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে। অনেক পরিবারের অভিভাবকদের মধ্যে মায়েরা সমাজসেবার নামে সংসার, সন্তানকে আয়া-বাবুর্চির জিম্মায় রেখে বাইরে বেড়ান এবং বাবা ব্যবসার কাজে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান। অনুরূপ অভিভাবক মা-বাবার সান্নিধ্য বঞ্চিত এসব সন্তান বন্ধুনির্ভর হয়ে পড়ে। এদের পক্ষে এক সময় খারাপ বন্ধুবান্ধবদের পাল্লায় পড়ে মাদক দ্রব্যের কাছে সমর্পিত হয়ে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়।

অপরাধ প্রবণতা, সন্ত্রাস, মাস্তানি ও ছিনতাই এক কথায় অভিভাবকদের বিপথগামী সন্তানদের কাছ থেকে সমাজ ও দেশকে মুক্ত করতে হলে দায়িত্বহীনতা এবং অপসংস্কৃতির শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। কারণ, পরিবার হলো, ‘শিশুর প্রথম পাঠশালা’। এখান থেকে শিশুর স্বাভাবিক চরিত্র গঠনের কাজ শুরু হয়। কথিত আছে, ‘সকালের সূর্য দেখেই সারা দিনের আবহাওয়া অনুমান করা যায়।’ ঠিক তেমনি প্রাক প্রাথমিক স্তরের শিশুর চরিত্র গঠনের ওপর শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। এ জন্য অভিভাবককে তার সন্তানের সুশিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আর এ সুশিক্ষার পূর্বশর্ত হলো, ধর্মীয় অনুশাসন। ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে জীবনের মৌলিক দর্শনের পরিচয় তাদের অবশ্যই করিয়ে দিতে হবে।

অপরদিকে শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। হাঁটি হাঁটি পা-পা করে শিশু বড় হতে থাকে এবং চারপাশে যা দেখে তাই অনুকরণ করতে পছন্দ করে। এ জন্য শৈশব থেকে শিশুর নির্মল ও সুন্দর চরিত্র গঠনের জন্য অভিভাবককে খুব সতর্কতা নিয়ে চলতে হবে। যাতে তাদের সামান্যতম ভুলের মাশুল সন্তানের ওপর না বর্তায়। এ জন্য অভিভাবকদের ধৈর্য, সহনশীলতা, সংযম ও সমঝোতা দেখাতে হবে। স্নেহ-প্রীতি, ভালোবাসা, আচার-আচরণের প্রতিও লক্ষ করতে হবে। অভিভাবকদের মধ্যে মা সন্তানের প্রতি সমতার ভিত্তিতে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন এমনভাবে করবেন, যা শিশুর জন্য অনুকরণীয় ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে। যেহেতু শিশুরাই জাতির তথা দেশের ভবিষ্যৎ, তাই দিকনির্দেশনায় অভিভাবকদের হতে হবে আন্তরিক। কোনোক্রমেই অবহেলা করা যাবে না। একমাত্র অভিভাবকদের অবহেলা এবং দুর্বলতার কারণেও শিশুরা তাদের ভবিষ্যৎ সোনার জীবন হারিয়ে অবক্ষয়ের পথ বেছে নিচ্ছে। সুতরাং এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেষ্ট হতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে, যেন কখনো কোনো শিশুর প্রতিভা বিকাশে বাধার সৃষ্টি না হয়। শিশুরা যেন মায়া-মমতা ও ভালোবাসার পরিবেশে দেশ ও সমাজের উপযুক্ত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। এ কামনা সব অভিভাবকের প্রতি।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist