পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ০৬ এপ্রিল, ২০২০

দিল্লি বিমানবন্দরে ৮ মালয়েশীয় গ্রেফতার, নিষ্প্রদীপ ভারত

দিল্লির নিজামুদ্দিন মসজিদে তাবলিগ জামাতের সমাবেশ থেকে দেশে ফেরার বিমান প্রায় ধরে ফেলার আগেই মালয়েশিয়ার আটজন শেষ মুহূর্তে দিল্লি বিমানবন্দরে গ্রেফতার হয়েছে। তাদের দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে বিমানবন্দর সূত্রে খবর। দেশে করোনার সংক্রমণ রুখতে গত ২২ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ। বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতে এসে আটকে পড়া নাগরিকদের দেশে নিয়ে যেতে বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে ভারতে। গতকাল রোববার তেমনই একটি বিশেষ বিমান পাঠায় মালয়েশিয়া সরকার। সেই বিমানে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন ওই আটজন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অভিবাসন দফতর তাদের আটকে দেয়। তারপর দিল্লি পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাদের। জানা গেছে, স্ক্রিনিং ও মেডিকেল টেস্টের পরে তাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হতে পারে। ইতোমধ্যে তাবলিগ জামাতে যোগ দেওয়া ৯৬০ জন বিদেশিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। ভিসার নিয়ম ভেঙে ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কিন্তু তারপরও এই আটজন কীভাবে লুকিয়ে ছিলেন এবং সরাসরি বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, প্রত্যেকে আলাদা আলাদা জায়গায় লুকিয়ে ছিলেন তারা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা মোকাবিলায় সবরকম ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার তিনি এ নিয়ে আলোচনা করতে ফোন করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের। কথা বলেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও নানা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। ফোনে তার দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। করোনা রুখতে কী কী পদক্ষেপ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনার জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও প্রতিভা পাতিলের সঙ্গে কথা বলেছেন। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও এইচ ডি দেবগৌড়াকে ফোন করেও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এছাড়াও তিনি ফোনে বহুক্ষণ কথা বলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় তাদের মধ্যে। পাশাপাশি কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, মুলায়ম সিং যাদব, অখিলেশ যাদব, নবীন পট্টনায়েক, কে চন্দ্রশেখর রাও, এমকে স্তালিন ও প্রকাশ সিং বাদলসহ নানা নেতাদের ফোন করে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। জানা গেছে, করোনাভাইরাসের অন্ধকার থেকে দেশকে আলোর পথে নিয়ে যেতে চান বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই উদ্দেশেই গতকাল রোববার রাত ৯টায় ঘরের আলো নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালানোর ডাক দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী, গতকাল রোববার সকালে সেই কথা পুনরায় মনে করিয়ে দিয়েছেন। টুইটে লিখেছেন, রাত ৯টা-৯ মিনিট মনোবল বাড়াতে পারস্পরিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিন। একই কথা লিখেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।

অন্যদিকে, ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি অনেকটাই খারাপ হয়েছে। প্রাণ গেছে ১১ জনের। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৪৭২ জন, জানিয়েছে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লভ আগরওয়াল জানিয়েছেন, দেশে এখন পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৩৭৪ জনে শরীরে মিলেছে করোনাভাইরাস। নতুন করে ৪৭২ জনের করোনাভাইরাসের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ৭৯। ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, ২৬৭ জন করোনা থেকে সেরে ওঠেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৯০। সেখানে ৫৬ জন সেরে ওঠেছেন বলে জানানো হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে নতুন করে ১৪ জনের শরীরে করোনা মেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০৬। আক্রান্ত অনেকটা বেড়েছে অন্ধ্রপ্রদেশেও।

এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ রোখার জন্য গতকাল রোববার থেকে চেন্নাইজুড়ে ডোর-টু-ডোর স্ক্রিনিংয়ের জন্য ১৬ হাজার প্রশিক্ষিত কর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত কর্মীদের সবার কাছে থাকবে বিশেষ পোশাক বা পিপিই। তারা চেন্নাইয়ের বিভিন্ন স্থানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিদিনের রিপোর্ট জমা দেবেন। মূলত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্তদেরই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাদের সাহায্যের জন্যে রাজ্য সরকার আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ১০ লাখ আবাসনের বাসিন্দাদের ওপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করার পরিকল্পনা করেছে। তবে ঘরে ঘরে স্ক্রিনিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে একদমই সন্তুষ্ট নন কিছু বাসিন্দা। চেন্নাইয়ে এ পর্যন্ত করোনায় ৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তামিলনাড়ুতে আরো দুজন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। উভয়েরই দিল্লির তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। গত শনিবার তাবলিগ জামাতে অংশ নেওয়া আরো ৭৩ জন লোকের করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ এসেছে। যার দরুন তামিলনাড়ুতে মোট করোনা আক্রান্ত ৪৮৫। সারা দেশের নিরিখে মহারাষ্ট্রের পরে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত তামিলনাড়ুতেই। রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব বিলা রাজেশ বলেছেন, তামিলনাড়ুর সন্দেহভাজনদের মধ্যে ৪৩৭ জন দিল্লির অংশগ্রহণকারী। মোট দেড় হাজার জন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে, সমস্ত ১ হাজার ২০০ জনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাজ্যজুড়ে হাসপাতাল বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close