নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ মার্চ, ২০২০

লোক গবেষক আশরাফ সিদ্দিকীর ইন্তেকাল

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান লোক গবেষক ড. আশরাফ সিদ্দিকী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত বুধবার রাত ৩টায় অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। দীর্ঘ এক মাস ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ২টায় বাদ জোহর রাজধানীর ধানমন্ডির শাহী ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা হয়েছে।

জানাজা শেষে আশরাফ সিদ্দিকীর লাশ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার জানাজায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ধানমন্ডিবাসী উপস্থিত ছিলেন।

আশরাফ সিদ্দিকীর জানাজায় তার ছেলে রিয়াদ সিদ্দিকী বলেন, আমার বাবা যদি কারো কাছে ভুলত্রুটি করে থাকেন তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সেইসঙ্গে তার যদি কোনো দেনাপাওনা থাকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি পরিশোধ করে দেব।

রিয়াদ সিদ্দিকী আরো বলেন, দেশে চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে আমার বাবার মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান আপাতত করছি না। পরবর্তী সময়ে আমাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে বাবার জন্য দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।

১৯২৭ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলে জন্ম নেওয়া ড. আশরাফ সিদ্দিকী ছিলেন একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক, লোক ঐতিহ্য গবেষক, এবং শিশু সাহিত্যিক। বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তিনি তাদের একজন।

শিক্ষাজীবন শেষে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। তিনি তৎকালীন জগন্নাথ সরকারি কলেজে ও চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনসহ রাজশাহী সরকারি কলেজে, ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের স্বনামধন্য অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পুরোভাগে রয়েছে ড. আশরাফ সিদ্দিকীর স্মরণীয় অবদান। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন খ্যাতনামা এ লোকবিজ্ঞানী।

১৯৭৬ থেকে ছয় বছর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৩ সালে জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকেই তিনি অবসরে যান। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ ‘তালেব মাস্টার ও অন্যান্য কবিতা (১৯৫০)’, ‘সাত ভাই চম্পা (১৯৫৩)’, ‘বিষকন্যা (১৯৫৫)’, ‘উত্তরের তারা’, ‘বৃক্ষ দাও, ছায়া দাও (১৯৮৪)’, ‘দাঁড়াও পথিক বর (১৯৯০)’, ‘সহস্র মুখের ভিড়ে (১৯৯৭)’।

গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘রাবেয়া আপা (১৯৬৫)’, ‘গলির ধারের ছেলেটি (১৯৮১)’, ‘শেষ নালিশ (১৯৯২)’, ‘লোকসাহিত্য’, ‘লোক সাহিত্য প্রথম খ- (১৯৬৩)’, ‘রবীন্দ্রনাথের শান্তি নিকেতন (১৯৭৪)’, ‘কিংবদন্তির বাংলা (১৯৭৫)’, ‘শুভ নববর্ষ (১৯৭৭)’, ‘লোকায়ত বাংলা (১৯৭৮)’, ‘আবহমান বাংলা (১৯৮৭)’, ‘বাংলার মুখ (১৯৯৯)’, ‘প্যারিস সুন্দরী (১৯৭৫)’, ‘বাংলাদেশের রূপকথা (১৯৯১)’, ‘লোক সাহিত্য দ্বিতীয় খ-’। এছাড়াও তার লেখা বেশকিছু শিশুসাহিত্য ও উপন্যাস রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close