জুয়েল রানা লিটন, নোয়াখালী

  ১৯ নভেম্বর, ২০১৯

স্বপ্ন এখন হাতের মুঠোয়, বদলে যাবে অর্থনীতির চালচ্চিত্র

নোয়াখালীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ করতে জেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের উত্তর ওয়াপদা বাজারসংলগ্ন এলাকায় বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আর এই বিমানবন্দর দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে নোয়াখালীবাসী। এতে এই জেলার অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে বলে দাবি তাদের। সরকারদলীয় এক নেতা বলেছেন, এই বিমানবন্দর নির্মাণ এখন আর দুঃস্বপ্ন নয়, এটা এখন আমাদের হাতের মুঠোয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আগে চর শোলাকিয়া নামক স্থানে ১৯৯৫ সালে সরকারিভাবে একটি বিমানবন্দর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ জন্য ৪০ একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। নির্মাণ সম্পন্ন হয় বিমানবন্দরের রানওয়ের, যেখানে প্রাথমিকভাবে খরচ হয় প্রায় দুই কোটি টাকা। কিন্তু কিছু জটিলতায় সংযোগ সড়ক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মিত না হওয়ায় বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত ওই বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। সরকারি উদ্যোগে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য শিল্প-কারখানা গড়ে না উঠলেও বেসরকারি উদ্যোগে অনেকগুলো এগ্রো বেইজড ক্ষুদ্রশিল্প গড়ে উঠে এ অঞ্চলে। তাই সাগরতীরের নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা হলে এ অঞ্চলের শিল্প সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবে সরকার।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্থানীয় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের এ দাবি অবশেষে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এভিয়েশন অথরিটি কোনো ফান্ড না দেওয়ায় এ সমীক্ষা কমিটির কাজে বিলম্ব হচ্ছে। নোয়াখালী জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ধর্মপুর ইউপির উত্তর ওয়াপদা বাজারের পাশে জেলা কৃষি সম্প্রসারণের অধিদফতরের আগের তৈরি রানওয়েসহ বিশাল জায়গায় প্রস্তাবিত বিমানবন্দরের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নির্মাণকাজের পরামর্শক নিয়োগ শেষে সমীক্ষা ও যাচাইয়ের জন্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফান্ড না দেওয়ায় তারা কাজ করতে পারেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিমানবন্দর সমীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ড. মোহাম্মদ ইউছুফ মিয়া জানান, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি কোনো ধরনের ফান্ড না দেওয়ায় আমরা কাজ করতে পারছি না। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ মোট সাত সদস্যের একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটি তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা থাকলেও অর্থনৈতিক ফান্ড না থাকায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারিনি।

প্রস্তাবিত জায়গায় পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ২২ জুলাই সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন, পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্থান পরিদর্শন করে বিমানবন্দর নির্মাণের ঘোষণা দেন। তিনি বিমানবন্দরের স্থান পরিদর্শনে এসে বলেন, ‘আমি নোয়াখালীর সন্তান হিসেবে নোয়াখালীর জন্য কিছু করার স্বপ্ন ছিল দীর্ঘদিন। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় নোয়াখালী অঞ্চলে প্রবাসীদের সংখ্যা অনেক বেশি। নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ হলে তারা সরাসরি বিদেশ থেকে নোয়াখালীতেই আসতে পারবে। একই সঙ্গে নিঝুম দ্বীপে বিদেশি পর্যটকরাও আসতে পারবেন। এতে তাদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হবে না এবং ঢাকার বিমানবন্দরের ওপরও চাপ কমে যাবে।’

নোয়াখালীর প্রস্তাবিত বিমানবন্দরের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী জানান, নোয়াখালীতে বিমানবন্দর এখন আর স্বপ্ন নয়, এটা বাস্তব। আমি বারবার বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। নোয়াখালীর ডিসি তন্ময় দাস জানান, এখানে বিমানবন্দর নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর সম্মতি রয়েছে। জেলাবাসী দ্রুত বিমানবন্দর বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। তিনি আরো জানান, আমরা বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিছুদিনের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ টিম আসবে। বিমানবন্দর নির্মাণ হলে নোয়াখালীর অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close