নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯

জাপার কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে পরিবর্র্তন আসছে

একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় আসা মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। ৯০ ছুঁই ছুঁই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ঘোষণা দিয়েছেন, তার অবর্তমানে দলের চেয়ারম্যান হবেন তার ভাই ও দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। স্ত্রী ও বিদায়ী সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে বাদ রেখে ভাই কাদেরকে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতাও বানিয়েছেন এরশাদ।

এদিকে, জাতীয় পার্টির সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ২০১৬ সালের এপ্রিলে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলতি বছর এপ্রিলেই আবার কাউন্সিল হওয়ার কথা। কাউন্সিলের আগেই সম্প্রতি বেশ কয়েকজন নেতাকে পদোন্নতি দিয়ে প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত করেন এরশাদ, যা নিয়ে পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

এ বিষয়ে দলের দফতর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বলেন, কয়েকটি জেলায় কাউন্সিল হলে দু-তিন মাসের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিলের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

দলে এরশাদের সর্বময় ক্ষমতা নিয়ে এক সময় সরব হয়েছিলেন তার স্ত্রী পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ দলের সব সিদ্ধান্ত একাই নেন বলে তাকে ‘একনায়ক’ হিসেবেও বর্ণনা করেছিলেন রওশন। একাদশ নির্বাচনের পর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর শিকদার লোটন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ঠিক করার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ নিয়েও মুখ খোলেন। সম্প্রতি দলের এক বৈঠকে রওশন এরশাদ আবারও এরশাদের ভূমিকা নিয়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন বলে জানা যায় জাতীয় পার্টির নেতাদের কথায়।

এসব সমস্যার সমাধানে প্রেসিডিয়াম সদস্যরা উদ্যোগী হবেন জানিয়ে দলের কো- চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, আগামীতে যখন কাউন্সিল করব তখন নতুন করে এগুলোর পরিবর্তন করা হবে, শাফল করা হবে। তখন এগুলোর বিষয়ে আমরা দেখব আর কি। মোটামুটি একটা নীতিমালা করব আমরা। আমরা লক্ষ্য রাখব এতে যেন দলে একটা শৃঙ্খলা থাকে যেন কোনো বিতর্কের সুযোগ না থাকে।

কাউন্সিলের আগেই বেশ কয়েকজনকে পদোন্নতির বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, সিদ্ধান্ত উনি নিজেই নিয়েছেন। কারো সঙ্গে পরামর্শ করে কিছু করেননি। উনি নিজের ডিসিশনে করেছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।

এরশাদের একক কর্তৃত্ব নিয়ে দলে বিতর্কের বিষয়ে কাদের বলেন, একচুয়ালি প্রেসিডিয়াম তৈরি করার ব্যাপারে বা অন্য পদ-পদবি তৈরি করার ব্যাপারে দলের গঠনতন্ত্রে ঢালাও কর্তৃত্ব দেওয়া আছে চেয়ারম্যানকে। অনেক সময় অনেক কারণে তিনি এগুলো করেন, পার্টির স্বার্থে করেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উনার করার অধিকার আছে। উনার সে যোগ্যতাও আছে।

দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের অবস্থান নিয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও কাদের বলেন, দলে যে পরিবর্তন হতে পারে পার্টির চেয়ারম্যান সে ভূমিকাই নিয়েছেন। সেখানে ব্যক্তিবিশেষের বলার বা করার কিছু থাকে না। তবে দলের সব সিদ্ধান্তে এরশাদের একক কর্তৃত্বের বিষয়টি নিয়ে আগামী কাউন্সিলে যে আলোচনা হবে তার আভাস স্পষ্ট করেই দিয়েছেন তার ভাই। পার্টি চেয়ারম্যানের সর্বময় ক্ষমতা আছে। পার্টির ভাবমূর্তি উনার ওপর ডিপেন্ড করে। আমাদের যে সমর্থন আছে তার অনেকটা কারণ তিনি নিজে। দেখা যাক, সামনের কাউন্সিলে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি দাবি করেন, জাতীয় পার্টির সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে থাকার সিদ্ধান্তকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। সংসদে যারা আমাদের বিরোধী দল, যারা প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, ভোটে তাদের বিপর্যয় হয়েছে। সংসদটাকে কার্যকর করা, সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের বিরোধীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা সে দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলাম, সবাই সেটাকে স্বাগত জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টি অংশীদারিত্ব নিলে সংসদ ‘একতরফা’ হয়ে যেত মন্তব্য করে বিরোধী দলীয় উপনেতা কাদের বলেন, তখন জনগণের কল্যাণে কাজ করতে অসুবিধা হতে পারত।

জাতীয় পার্টি ছাড়াও মহাজোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, তরিকত ফেডারেশন ও বিকল্পধারা। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২২টি এবং বাকি দলগুলো ৭টি আসন পেয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের এবারের মন্ত্রিসভায় শরিক দলের কারো জায়গা হয়নি।

এ বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, আমরা প্রধান বিরোধী দল হিসেবে থাকব। সেখানে আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ করে একতাবদ্ধভাবে কিছু করতে পারলে পরিধি বাড়বে। আমাদের ভয়েস জোরালো হবে। উনারা (অন্য শরিকরা) যদি আমাদের সঙ্গে আসেন তবে সংঘবদ্ধভাবে জনগণের কথা বলার চেষ্টা করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close