সংসদ প্রতিবেদক

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮

৩২ ধারা বহাল রেখে প্রতিবেদন জমা সংসদীয় কমিটির

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ এর বহুল আলোচিত ৩২ ধারা বহাল রেখে সংসদে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।গতকাল সোমবার রাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. ইমরান আহমেদ প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করেন। বিলের ৩২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের আওতাভুক্ত অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওযার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অপরাধ সংঘটন করেন বা করিতে সহায়তা করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ১৪ বছরের কারাদ- বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। ৩২ (২) ধরায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি উপধারা-১ এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুনঃ সংঘটন করেন, তাহা হইলে যাবজ্জীবন কারাদ- বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বহুল আলোচিত ওই ধারার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস কাউন্সিল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন-অ্যাটকোরসহ সব স্টেকহোল্ডাররা। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) এর ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা সম্পর্কে তাদের আপত্তি রয়েছে। বিলের ওই ছয়টি ধারা বিদ্যমান থাকলে স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটির সঙ্গে তাদের একাধিক বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের প্রস্তাব আমলে নেয়া হয়নি। বিলের ২৫ ধারা নিয়েও আপত্তি তোলা হয়। সংসদীয় কমিটির সুপারিশকৃত বিলের ২৫ ধারায় আক্রমণাত্মক, মিথ্যা ও ভীতি প্রদর্শন, তথ্যউপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ, ইত্যাদি বিষয়ে (ক) উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যাহা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোন তথ্যউপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন, বা খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণœ করিবার, বা বিভ্রান্তি ছড়াইবার, বা তদুদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো তথ্য সম্পূর্ণ আ আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি অনধিক ৩ বছরের কারাদ- বা অনধিক ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন অপরাধের জন্য ৫ বছরের কারাদ- ও ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। বিলের ২১ ধারায় নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগন্ডা ও প্রচার চালানো বা উহাতে মদদ প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুরূপ কার্য ইইবে একটি অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি অনধিক ১০ বছরের কারাদ- বা অনধিক ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয়দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদ- ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ও নিরাপদ ব্যববহার আবশ্যক বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুফল ভোগের পাশাপাশি অপপ্রয়োগও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে সাইবার অপরাদের মাত্রাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এতে বলা হয়েছে, জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও ডিজিটাল অপরাধসমূহের প্রতিকার, প্রতিরোধ, দমন, শনাক্তকরণ, তদন্ত এবং বিচারের উদ্দেশ্যে এ আইন প্রণয়ন অপরিহার্য। সাইবার তথা ডিজিটাল অপরাধের কবল থেকে রাষ্ট্র এবং জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান এ আইনের অন্যতম লক্ষ্য। আরো বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নকে প্রকারান্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার পুনর্জাগরণ বলা যেতে পারে। এই মহান স্বপ্নদ্রষ্টার সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারই যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন মহলের আপত্তি সত্ত্বেও গত ৯ এপ্রিল বহুল আলোচিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি খসড়া আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ব্যাপক সমালোচিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা তথ্যপ্রযুক্তি আইন থেকে সরিয়ে সেগুলো আরো বিশদ আকারে যুক্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close