মনির হোসেন, বেনাপোল থেকে
এখনো আসনের চেয়ে কম যাত্রী নিয়ে চলছে ‘বন্ধন’
খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে সরাসরি চলাচলকারী ট্রেন ‘বন্ধন’ এক্সপ্রেসে যাত্রী ক্রমান্বয়ে বাড়লেও, এখনো আসন সংখ্যার চেয়ে চার গুণ কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ১০টি কোচের এই ট্রেনে ৪৫৬টি আসন থাকলেও যাতায়াত করছে ১০০ থেকে ১২০ যাত্রী। অথচ বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ৪-৫ হাজার পাসপোর্টযাত্রী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করে থাকে। এজন্য প্রচারণার অভাবকেই কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। এ ছাড়া দুই দেশের নির্দিষ্ট দুটি স্টেশনে টিকিট বিক্রি করায় যাত্রীদের অনীহা দেখা দিচ্ছে। তবে যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে রেল কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
রেল কর্তৃপক্ষের রেল পরিচালনার পদ্ধতিগত ভুলই যাত্রী স্বল্পতার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন এ রুটে যাতায়াত করা ব্যক্তিরা। তাদের বক্তব্য, যশোর ও বেনাপোল রেলস্টেশনে টিকিট বিক্রি না করা, সেখানে স্টপেজ না দেওয়া, অন্যদিকে সপ্তাহে মাত্র এক দিন এ রুটে ট্রেন চলাচলকেই যাত্রী কম হওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। এ ছাড়া ভাড়ার পরিমাণও যাত্রীস্বল্পতার আর একটি বড় কারণ। ১২০ কিলোমিটার সড়কে এসি সিটে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ভ্রমণকরসহ ২ হাজার টাকা ও এসি চেয়ারে নেওয়া হচ্ছে ভ্রমণকরসহ ১ হাজার ৫০০ টাকা। কলকাতা থেকে প্রতি
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ছেড়ে এসে সাড়ে ১২ টায় খুলনায় পৌঁছে। খুলনা থেকে ১-৩০ মিনিটে ছেড়ে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে কলকাতা পৌঁছে। অথচ বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে একজন পাসপোর্ট যাত্রীর কলকাতা যেতে ভ্রমণকরসহ খরচ হয় মাত্র ৬০০ টাকা।
যশোর নাগরিক কমিটি যশোর রেলস্টেশনে টিকিট বিক্রি ও যাত্রী ওঠানো-নামানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তাতেও তেমন একটা সাড়া মেলেনি রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন ‘বন্ধন’ এক্সপ্রেসের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর। গত ৭ মাসে ট্রেনের যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি না পেয়ে ক্রমাগত কমতে শুরু করেছে। ফলে লোকসানের বোঝা টানতে হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষের। লোকসানের বোঝায়ই যেন বন্ধ হয়ে না যায় খুলনা-কলকাতার ‘বন্ধন’ মৈত্রী ট্রেন।
ভারতীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার স্বার্থে আপাতত খুলনা ও কলকাতা ছাড়া কোথায়ও স্টপেজ বা টিকিট বিক্রি করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন রেল স্টেশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হলে অন্যান্য স্টপেজে যাত্রী উঠানামা ও টিকিট বিক্রির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এ রুটে চলাচলকারী বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রী আসাদুল হক বলেন, ভারতীয় কাস্টমসে যাত্রী হয়রানি, বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রীদের ভারতে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাত অবস্থান বাধ্যতামূলক করায় যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে না। এ ছাড়া এই রুটে যশোর বেনাপোলে এক দিনের বদলে দুই/তিন দিন চালু থাকলে ও ভাড়ার পরিমাণ কমালে যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
ভারতীয় পাসপোর্টযাত্রী মনতোষ বসু খুলনা-কলকাতা রুটে ট্রেন চলাচলের প্রচার না হওয়া, নির্দিষ্ট দুটি স্টেশনে টিকিট বিক্রি করায় যাত্রীরা ট্রেন যাতায়াতে আগ্রহ হারাচ্ছে বলে মনে করেন। অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি ও স্টপেজ বাড়ালে যাত্রী বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
বেনাপোল রেলস্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম বলেন, নিরাপদে ও সুষ্ঠুভাবে যাত্রী চলাচল করার পরও যাত্রীসংখ্যা দিন দিন কমছে। ‘বন্ধন’ এক্সপ্রেসটি সপ্তাহে একাধিক দিন চলাচল করলে এবং যশোর ও বেনাপোলের মানুষের জন্য টিকিটি বিক্রি ও স্টপেজ দেওয়া হলে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তিনি জানান।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, আমরা ভালো সার্ভিস দিচ্ছি। আপাতত যাত্রীসংখ্যা একটু কম। ট্রেনে খরচ একটু বেশিই পড়ে। খুলনাসহ আশপাশের লোকজন ট্রেনে যাতায়াত বেশি করছেন।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার নু চ প্রু বলেন, বন্ধন ট্রেনের বেশির ভাগ যাত্রী হয় রোগী, না হয় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যায়।
"