নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ এপ্রিল, ২০১৮

‘ভাইয়া নেই, আমাদের চলার গতিও নেই’

রাজীবের পরিবার ক্ষতিপূরণ চায়

শৈশবে মা-বাবা হারা রাজীব হোসেনের সব স্বপ্ন আর সব লড়াই শেষ হয়ে গেছে দুর্ঘটনায়; তার ছোট দুই ভাইয়ের সামনে এখন অনিশ্চয়তার সীমা নেই। চোখে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে রাজীবের মেজো ভাই মেহেদী বলল, ‘ভাইয়া নেই, আমাদের তো আর চলার গতিও নেই।’ এদিকে, রাজীবের মৃত্যুতে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছে তার পরিবার। তারা বলছেন, রাজীবের অবর্তমানে তার এতিম দুই ছোট ভাইয়ের জন্য ওই অর্থ দরকার।

এ মাসের শুরুতে ঢাকার ব্যস্ত সড়কে দুই বাসের চাপায় যেভাবে কলেজছাত্র রাজীবের হাত কাটা পড়েছিল, তা কাঁপিয়ে দিয়েছিল পুরো বাংলাদেশকে। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে, সব কষ্টের ইতি ঘটিয়ে সোমবার রাতে এই তরুণ চলে গেছেন না ফেরার দেশে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দাঁড়িয়ে মেহেদী যখন কথা বলছিল, ছোট ভাই আবদুল্লাহও ছিল তার পাশে। তারা দুজন যাত্রাবাড়ীর তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সপ্তম আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

পটুয়াখালীর বাউফলের ছেলে রাজীব যখন তৃতীয় শ্রেণিতে, তখনই মারা যান তার মা। বাবাও চলে যান রাজীব অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে খালার বাসায় থেকে, কঠোর পরিশ্রমে স্নাতক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ওই তরুণ।

তিতুমীর কলেজে পড়াশোনার ফাঁকে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে আর আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় নিজের পাশাপাশি ছোট দুই ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছিলেন তিনি।

সদ্য কৈশোরে পৌঁছানো মেহেদী জানে না, কিভাবে এই বিপদ মোকাবিলা করা সম্ভব। সে ভাবছে, সরকার যদি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে অন্তত লেখাপড়াটা হয়তো চালিয়ে নিতে পারবে তারা। এখন শুধু আমাদের খালা, মামা, আর সরকার আছে। সরকার থেকে যদি একটু সহায়তা পাই। ছোটবেলা থেকেই ভাইয়ার পড়াশোনায় অনেক আগ্রহ ছিল। নিজে নিজেই বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়ে চলে আসত, প্রাইভেট টিউশান লাগেনি। খুব সমস্যা না হলে কারো সাহায্য ভাইয়া নিতে চাইত না।

তিনি বলেন, রাজীব সবসময় চাইত জীবনকে কিভাবে একটু ভালো করা যায়। কষ্টে কষ্টেই ওর জীবনটা কেটেছে। প্রায়ই রাতে ভাগ্নের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হত জাহিদুলের। সে কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনি। রাত ১২টায় যখন তাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতামÑ মামা কি কর? ও বলত, ‘মামা টাইপ করি।’ আমি বলতাম যে, আর কর না, বাসায় চলে যাও। ওই বলত, ‘মামা, অনেক টাকার দরকার তো...’।

এই জীবন সংগ্রামের মধ্যে রাজীবের কোথাও বেড়াতে যাওয়া হত না, বন্ধুদের সঙ্গেও সময় কাটানো হত না খুব বেশি। কম্পিউটারের ওই দোকানে কাজের পাশাপাশি গ্রাফিকসের কাজ শিখছিলেন তিনি, যাতে সামনের দিনগুলোতে অর্থ রোজগার আরেকটু সহজ হয়।

ক্ষতিপূরণ চায় রাজীবের পরিবার : বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর ঘটনায় রাজীবের মৃত্যুতে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন তার পরিবার। তারা বলেছেন, রাজীবের অবর্তমানে তার এতিম দুই ছোট ভাইয়ের জন্য ওই অর্থ দরকার।

রাজীবের কাকা পুলিশ পরিদর্শক আল আমিন বলেন, হাইকোর্ট এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে একটি রুল দিয়েছেন। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব সরকার সেই ব্যবস্থা করে দিক।

রাজীব আহত হওয়ার পরদিন ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট এক আদেশে তার চিকিৎসা ব্যয় দুই বাসের মালিককে বহনের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে রাজীবকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে নাÑ তা জানতে চেয়ে রুল দেওয়া হয়।

রাজীবের মৃত্যুর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে তার মামা জাহিদুল বলেন, বিআরটিসি থেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে, স্বজন পরিবহন থেকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল। এরপর একটাবার খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist