সম্পাদকীয়

  ১৮ মার্চ, ২০২০

অবিসংবাদিত নেতা এবং বাংলাদেশ

দৃঢ়চিত্ততা, সংকল্প আর কর্মোদ্যম। সঙ্গে আরো একটু যোগ করা হোক। দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি সহমর্মিতা। এই শব্দসমূহের মর্মার্থ অনুধাবন করে যিনি আত্মস্থ করতে সক্ষম হয়েছেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন, তাকে আর ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা কারো পক্ষে সম্ভব হয়েছে এমন উপমা সত্যিই বিরল। বিশেষত আমাদের দেশে। আমাদের ইতিহাসে। দেশ বলতে এখানে বাংলাদেশ, জাতিতে বাঙালি। সেই দেশ এবং জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। যার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু তার অর্জন। কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসার নির্যাসে গড়া এ অর্জনকে কোনো পাল্লায় তুলে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের কর্মকান্ড দিয়ে এ অর্জনকে তিল তিল করে গড়ে তুলতে হয়। তিনি তা করেছেন এবং অর্জনে সক্ষম হয়ে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ উপহার। জাতি তাঁকে জনকের মর্যাদা দিয়ে নিজেদের ধন্য করেছে। গতকাল দেশজুড়ে পালিত হয়েছে তার শততম জন্মদিন।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন থেকে বৈশিষ্ট্যের মাত্রানুসন্ধান করলে একে একে অনেকগুলোই সামনে এসে দাঁড়াবে; যা ইতোমধ্যেই আলোচনায় এসেছে। তবে দুটি বৈশিষ্ট্য তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে চেনার সুযোগ করে দিয়েছে। আর সে দুই বৈশিষ্ট্যের কারণেই তিনি বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যাকে আমরা রাখাল রাজা হিসেবেই মনের চিলেকোঠায় বসিয়েছি আমাদের ভালোবাসার সিংহাসনে। সে দুটি বৈশিষ্ট্যের কথা সামনের কাতারে না আনলে আমাদের সব আয়োজন অপূর্ণ থেকে যাবে। বৈশিষ্ট্য ১. অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া। ২. সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ থেকে বাঙালিকে মুক্ত করা। কৈশোরকাল থেকেই শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিল, ‘ইংরেজদের এ দেশে থাকার কোনো অধিকার নেই’। কারণ তারা এ দেশের মানুষকে শোষণ ছাড়া আর কিছুই করছে না। সেসময় গোটা ভারতবর্ষে স্বদেশি আন্দোলন চলছে। শেখ মুজিব সেই আন্দোলন থেকে দুরে থাকতে পারেননি। আন্দোলনে অংশ নিয়েই তিনি প্রমাণ করেছিলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই ছিল তার চিন্তা ও চেতনার বহিঃপ্রকাশ।

দৃঢ়চেতা মনোভাবই ছিল তার চরিত্রের অপর এক বৈশিষ্ট্য। যে বৈশিষ্ট্যকে অনেকেই একগুঁয়েমি বলেও আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু দৃঢ়চেতা মনোভাবই (একগুঁয়েমি) একসময় তাঁকে পূর্ববাংলার স্বার্থে আপসহীন নেতা হতে যে সহায়তা করেছিল; এ কথা আজ অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কৈশোরে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জের যে স্কুলে পড়তেন, সেখানে রেওয়াজ ছিল মুসলমান আর নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ক্লাসে পেছনের ছিটে বসবে। এমন একটা ব্যবস্থা মানতে পারেননি তিনি। ভাঙলেন বহু দিনের প্রথা। কৈশোর থেকেই তিনি যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক লড়াকু সৈনিক। তার প্রমাণ তার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রেখেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।

বঙ্গবন্ধু নিজে স্বপ্ন দেখতেন, স্বপ্ন দেখানোর মন্ত্রও তিনি জানতেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন একটি পৃথক আবাসভূমির। যে আবাসভূমিতে বাঙালি নিজেই নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হবে। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পাকিস্তানের ২৩ বছরে তিনি জেলে গিয়েছেন ১৮ বার। তবে একবারের জন্যও আপস করেননি। আর তার এই আপসহীন নেতৃত্বের ওপর ভরসা করেছে তারই ভালোবাসার মানুষ। তিনি সেই ভালোবাসার প্রতিদানে দিয়েছেন ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। একটি ভাষণ। স্বপ্নময় একটি ঘোষণা। একটি রাজনৈতিক মহাকাব্য, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

অতঃপর একটি রাষ্ট্র, একটি পতাকা, একটি জাতি এবং বাংলাদেশ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশ,অবিসংবাদিত নেতা,সম্পাদকীয়,বঙ্গবন্ধু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close