০২ মার্চ, ২০২০

একজন মৌরানী পাপিয়া ও তার ভ্রমরবিন্যাস

গতকাল গুলশান গিয়েছিলাম একটা কাজে। কয়েকবার হোটেল দি ওয়েস্টিনের সামনে দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়েছে। যতবারই ওয়েস্টিন এর সাইনবোর্ডটা চোখে পড়েছে ততবারই পাপিয়ার কথা মাথায় এসেছে। তখন মনে হয়েছে হোটেল ওয়েস্টিন আর পাপিয়া একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাপিয়া মানেই ওয়েস্টিন আর ওয়েস্টিন মানেই যেন পাপিয়া। এই ভূত মাথায় ঢুকে গেছে। কোনওভাবেই পাপিয়া ভূত মাথা থেকে যাচ্ছে না। ইদানিং খবরের কাগজ আর অনলাইন পোর্টালে পাপিয়াকে নিয়ে করা সমস্ত নিউজ মানুষ মনযোগ দিয়ে পড়ছে। কোনও খবরই পাবলিক বাদ দিচ্ছে না।

সেদিন অফিসের সামনে চায়ের দোকানে গিয়ে এই নামটা শুনতে হয়েছে। দোকানদার তার এক পরিচিত কাস্টমারকে বলছে- ‘সব পাপিয়া, সব পাপিয়া। পাপিয়ারা খাইয়া ফালাইছে দেশ’। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার মুখেই এখন পাপিয়ার নাম। এই পাপিয়ারা মধুরানী। মৌরানীও বলা চলে। তারা মুধ চাষ করে। আর সেই মধু খেতে সমাজের উচ্চবিত্তরা ভ্রমর হয়ে এসে ভিড় করে। ক্রমেই বাড়তে থাকে সেই ভ্রমরের সংখ্যা। আর তাতেই মৌরানীরা সুযোগে ওঁত পেতে থাকে। পর্যায়ক্রমে সুযোগ আসেও। কারণ বাগানে যখন কোনো ফুল ফুটে তখন সেই ফুলের মধু খেতে ভ্রমর ছুটে আসে। এটা জানা কথা। পাপিয়ারা ফাঁদ পাতে। ফুলে ফুলে মধু ছড়িয়ে দেয়। আর তাতেই ভ্রমর সেজে পুরুষ ছুটে আসে। কার্যসিদ্ধ হয় পাপিয়াদের।

এখন কথা হচ্ছে, আমরা শুধু এক পাপিয়া নিয়ে পড়ে আছি। আরও কতো শত শত পাপিয়া দৃষ্টির অন্তরালে তাদের নিজেদের ডেরায় বসে মধু বিলিবন্টন করে যাচ্ছে তার সন্ধান করার চেষ্টা কি আদৌ করা হচ্ছে? এই প্রশ্ন সমাজপতিদের কাছে। পাপিয়া কার কার সঙ্গে সেলফি তুলেছে সেই ছবিতে কারা আছে আমরা তাদের নিয়েই সমালোচনা করে যাচ্ছি। পাপিয়া যেহেতু রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তার উচ্চমহলে প্রবেশ করার একটা সুযোগ ছিলো। তাই সে রাজনৈতিক সেলিব্রেটিদের সঙ্গে সেলফি তুলেছে। তার মানে এই নয় যে পাপিয়ার সঙ্গে ছবিতে যারা আছেন সবাই পাপিয়ার খদ্দের ছিলেন। আমাদের চিন্তাভাবনাও পাল্টাতে হবে।

রিমান্ডে পাপিয়া যাদের নাম বলেছেন তাদেরকেও ছাড় দেয়া ঠিক হবে না। কারণ যারা পাপিয়া তৈরি করে তারা একজন পাপিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে না। তারা দলে দলে পাপিয়া তৈরি করে আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেয়। যদি এভাবে হিসাব করা হয়-এক পাপিয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে হাজার পুরুষ। তাহলে এভাবে কত পাপিয়া আছে যারা প্রতিদিন হাজার হাজার পুরুষ নষ্ট করছে। আজ পাপিয়া গ্রেফতার হয়েছে বলে খবর হয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার আগে খবর করতে হবে আড়ালে থাকা পাপিয়াদের। দৃষ্টি দিতে হবে- সমাজ কলুষিত হচ্ছে। বিবেক নষ্ট হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে পাপিয়া জন্মাতে থাকবে।

আসলে রাজনীতিবিদদের একটা যোগ্যতা থাকা দরকার। এখন সবাই রাজনীতিতে জড়াচ্ছে। যাদের কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলে পদ পাবার যে তোড়জোড়, তা বন্ধ করতে হবে। তাহলে পাপিয়ার মতো মৌরানীরা সুযোগ সন্ধানে রাজনৈতিক দল খুঁজত না।আ.লীগে একটা পদ পেলেই যেন কোটি কোটি টাকার মালিক। এই ধারা ভাঙতে হবে। এতে করে দলের বদনাম হচ্ছে, এদিকে সুদৃষ্টি দেয়া উচিত।

লেখক : প্রতিদিনের সংবাদের অনলাইন ইনচার্জ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মৌরানী,পাপিয়া,রিহাব মাহমুদ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close