পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা

  ৩০ মে, ২০২০

করোনার পরবর্তী হটস্পট পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্ব ভারত

দেশের পরবর্তী করোনার হটস্পট হিসেবে পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্ব ভারতকে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্র। গোটা দেশের মোট ১৪৫টি জেলাকে পরবর্তী কোভিড হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্র। এই জেলাগুলির বেশিরভাগই গ্রামীণ ভারতের অন্তর্গত। গত তিন সপ্তাহে এই জেলাগুলিতে করোনা সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেড়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সচিহ রাজীব গৌবা জানিয়েছেন যে কনেটেইনমেন্ট ব্যবস্থা ঠিকমতো না নেওয়া হলে এই জেলাগুলি করোনাভাইরাসের এপিসেন্টার হয়ে উঠতে পারে।পরিযায়ী শ্রমিকরা ফেরার ফলে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশার মতো রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বগামী।করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক ভাবে বাড়বে বলে মোট ১২টি রাজ্যকে সতর্ক করা হয়েছে।

পরিযায়ীরা ফেরার ফলে ত্রিপুরা এবং মণিপুরের মতো রাজ্যে আগের চেয়ে বেড়েছে করোনা সংক্রমণের হার।দেশে এখনও পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের হারে এগিয়ে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তামিলাড়ু, গুজরাট, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্য। কিন্তু আগামী দিনে পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি করোনা হটস্পট হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ১৫ দিনে এই সব রাজ্যে বেড়েছে করোনা সংক্রমণের হার।

এদিকে করোনা ভাইরাসের সঙ্কটকে সঙ্গে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় মেয়াদের একবছর পূর্ণ হয়ে গেল। এই পরিস্থিতিতে তিনি জাতির উদ্দেশে একটি চিঠি লিখে নিজের বার্তা দিয়েছেন। গতবছর অনেকগুলো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং দ্রুত অগ্রগতির দিকে এগোনোর চেষ্টা করা হলেও হঠাৎ করেই সবকিছুতে বাদ সেধেছে করোনা ভাইরাস নামের মারাত্মক সংক্রামক রোগটি। দেশকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বর্তমান পরিস্থিতি। আর এই করোনা সঙ্কটের ফলে সাংঘাতিকভাবে ভুগতে হচ্ছে দেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের, দেশবাসীকে এমনটাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে শুধু পরিযায়ীরাই নন, এই চরম সঙ্কটে গোটা দেশই ভুক্তভোগী। কিন্তু হতাশার বার্তার মধ্যেও আশার আলো দেখিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বিশ্বাস করেন, ভারত এই অবস্থা থেকে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং গোটা বিশ্বকে অবাক করে দেবে।

নিজের চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, এই ধরনের মারাত্মক সঙ্কটে কখনোই এমন দাবি করা যায় না যে কেউ কোনো অসুবিধা বা সমস্যায় পড়েননি। আমাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষজন, পরিযায়ী শ্রমিক, ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এবং কারিগর, হকার সহ দেশের সব ধরণের মানুষই প্রচণ্ড দুর্ভোগ সহ্য করছেন।তবে, আমাদের এদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের এইসব সমস্যাগুলো যেন কোনওভাবেই বিপর্যয়ের আকার না নেয়, একথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

গণতন্ত্রের সম্মিলিত শক্তি তাকে ফিরিয়ে এনেছিল দ্বিতীয় মেয়াদে, এমন কথা আরও একবার জোরগলায় বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।তার সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নরেন্দ্র মোদি দেশের জনতা জনার্দনের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠিতে তিনি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বর্তমানে যে যে চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে দেশ যাচ্ছে, সবকিছু নিয়েই কথা বলেছেন। করোনা ভাইরাস শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। এই ভয়াবহ সঙ্কটের সময় ভারত রীতিমতো অকুতোভয় হয়ে লড়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

তবে করোনা পরিস্থিতি এবং তার জেরে হওয়া লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে দেশের দিন আনি দিন খাই মানুষদের, একবাক্যে একথাও স্বীকার করেছেন তিনি। তবে জীবিকা হারিয়ে জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে ওঠা এই দিন মজুর এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা কাটাতে তৎপর কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন আশ্বাস দিয়েছেন যে, তার সরকার দিন মজুরিতে খেটে খাওয়া এই শ্রমিকদের দুর্ভোগ লাঘব করতে ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্প নিয়ে কাজ করছে। ১৩০ কোটি ভারতীয়দের শক্তিতে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবেই, আর সারা বিশ্ব অবাক হয়ে দেখবে ভারতকে, এই আশাই করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

অন্যদিকে দেশে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই যেন নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে কোভিড- ১৯। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় লাফ দিয়েছে ভাইরাস। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৯৬৪ জন, আর একদিনের মধ্যে ওই রোগের জেরে মৃত্যু হয়েছে ২৬৫ জনের। সব মিলিয়ে ভারতে মোট আক্রান্ত বেড়ে ১.৭৩ লক্ষে পৌঁছালো। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৯৭১ জনের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে মোট করোনা আক্রান্ত ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭৬৩ জন মানুষ।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনা,হটস্পট,পশ্চিমবঙ্গ,পূর্ব ভারত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close