নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী কচ্ছপ আসলে যায় কোথায়?

আইন অমান্য করে বেচাকেনা হয় বিলুপ্তপ্রায় এসব কচ্ছপ। বাংলাদেশে একসময় প্রচুর সংখ্যক কচ্ছপ পাওয়া গেলেও বর্তমানে প্রাণীটি প্রায় বিলুপ্ত। ২০১২ সালে আইন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও থেমে নেই কচ্ছপের অবৈধ শিকার, বিক্রি ও পাচার। ফলে একেবারে বিলুপ্ত হওয়ার হুমকিতে রয়েছে এই সরীসৃপ প্রাণীটি।

নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অবৈধভাবে কচ্ছপ শিকারের কারণ সন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদার কারণে কচ্ছপ শিকার করা হচ্ছে। দেশেই কিছু মানুষ আছেন, যারা কচ্ছপের মাংস পছন্দ করেন। আন্তর্জাতিক বাজারেও কচ্ছপের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এই মাংসের দাম অনেক বেশি হওয়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবাধে শিকার করে যাচ্ছে কচ্ছপ। ওজন অনুযায়ী, এগুলোর দাম নির্ধারিত হয়। দেশের বাজারে তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজনের একটি কচ্ছপের দাম চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম আরো বেশি।

বর্ষাকালে কচ্ছপ সাধারণত বড় বড় জলাশয়, বিল বা নদীতে অবস্থান করে। কিন্তু বর্ষা শেষে নদী বা বিলের পানি কমে গেলে এরা আশ্রয় নেয় ছোট ছোট জলাশয়ে। সেখান থেকেই শিকার করে রাজধানীর নির্ধারিত কিছু স্থান ও বিদেশি রেস্টুরেন্টগুলোতে বিক্রি করা হয় কচ্ছপ। আরেকটি চক্র আছে, যারা শিকারীদের কাছ থেকে কিনে আস্ত কচ্ছপ বা শুধু মাংস আলাদা করে দেশের সীমান্ত ও বিমানবন্দর দিয়ে দেশের বাইরে পাচার করে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কেবল বাংলাদেশ থেকে কচ্ছপ বিদেশে পাচার হয়- এমন না। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও কচ্ছপ বাংলাদেশে আসে। বেশ কয়েক বছর ধরে কচ্ছপ পাচারে বাংলাদেশ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এগুলো পরে চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, মিয়ানমার ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে পাঠানো হয়। এসব দেশে খাবার হিসেবে কচ্ছপের মাংসের যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনি কচ্ছপের হাড়ের ব্যবহার রয়েছে ওষুধ বানানোর কাজেও।

র‌্যাব-১০-এর সিনিয়র পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘আমাদের দেশে হিন্দুদের মধ্যে কচ্ছপের মাংস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। সংখ্যায় কম হলেও ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীরাও কচ্ছপের মাংস খেয়ে থাকেন। আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাঁখারিবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করি। তখন ১০০ কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়। এই অপরাধে তিনজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই চক্রে আরো ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে, যারা নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জের চর এলাকা থেকে এসব কচ্ছপ শিকার করে রাজধানীতে বিক্রি করে। তাদের আইনের আওতায় আনতে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে র‌্যাব। নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে যারা কচ্ছপ বিক্রি করে ও খায়- দুজনেই সমান অপরাধী বলে জানান ফারুকী।

শাঁখারিবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘এসব কচ্ছপ মাংস হিসেবে বিক্রি করা হয়ে থাকে। কিছু সনাতন ব্যক্তি এই মাংসটা খেতে পছন্দ করেন। আবার দেশের কিছু রেস্টুরেন্টেও কচ্ছপের মাংস বিক্রি করা হয়। বিশেষ করে গুলশান-বনানীর বিদেশি রেস্টুরেন্টগুলোতে এগুলোর বিক্রি বেশি। কচ্ছপ ও কচ্ছপের মাংসের বিদেশি ক্রেতাও আছে। আমরা এর আগেও একাধিকবার অভিযান চালিয়েছি।

বিদেশে পাচারের সময় আমরা বিমানবন্দর থেকে কচ্ছপ উদ্ধার করেছি। এয়ারপোর্ট ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচার হয় কচ্ছপ। ভারত-চীনসহ বেশকিছু দেশে কচ্ছপ পাচার হয়। সঠিক সংখ্যা বলা না গেলেও এটা বলা যায়, বেশ কয়েকটি চক্র কচ্ছপ শিকার ও পাচারে জড়িত। আমরা অভিযান পরিচালনার সময় লক্ষ করেছি, আলাদা আলাদা চক্র এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।’

বণ্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম কুমার মল্লিক বলেন, ‘দুখের বিষয়, আমরা কাউকে এই অপরাধে সাজা দেওয়ার পর সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া পেয়ে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

মূলত মাংস খাওয়ার জন্য কচ্ছপের বেচাকেনা ও পাচারের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রব মোল্লা। তিনি বলেন, ‘খাওয়ার জন্য কচ্ছপ শিকার, বেচাকেনা ও পাচার হয়ে থাকে। এগুলো বেশ ভালো দামে বিক্রি হয়। আগে আমাদের দেশ থেকে বিভিন্ন দেশে কচ্ছপ যেত, সেই অভ্যাসটাই এখনো রয়ে গেছে।

আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি প্রজাতির কচ্ছপই বিপন্ন। এর মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি আরো বেশি বিপন্ন। দিন যত যাচ্ছে, কচ্ছপের সংখ্যা ততই আশঙ্কাজনক হারে কমছে। কচ্ছপ রক্ষায় আমাদের দেশে আইন রয়েছে। বন বিভাগ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) এসব প্রাণীর অ্যাসেস করে থাকে। তারা বেসরকারিভাবেই এই অ্যাসেসমেন্টটা করে থাকে। এর ওপর ভিত্তি করে সরকার আইন প্রণয়ন করে। আমাদের দেশের এ সম্পর্কিত আইন অনুযায়ী, কচ্ছপ শিকার, সংগ্রহ ও আমদানি-রফতানি নিষিদ্ধ।’

"পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিলুপ্তপ্রায়,কচ্ছপ,কচ্ছপ শিকার,নিষেধাজ্ঞা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist