মেহেদি জামান লিজন, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

  ৩১ মার্চ, ২০২৪

ত্রিশালের বাহাদুরপুর গ্রাম

‘বেশি’ দামে জমি না কেনায় ভাটায় মাটি বিক্রি, ভাঙনের ঝুঁকিতে তিন পরিবারের বসতঘর

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাজার দরের চেয়ে দামে জমি বিক্রি করতে না পেরে গভীরভাবে খনন করে ইটভাটার কাছে মাটি বিক্রি করেদিয়েছেন এক প্রভাবশালী। এতে ওই জমির পাশের থাকা তিন পরিবারের বসতঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। ঘটনাটি উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের। প্রভাবশালী ব্যক্তি বাজারদরের চেয়ে ‘চারগুণ বেশি’ দামে জমি বিক্রি করতে চাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর গ্রামের বাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এ ধরনের একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন একই গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রাকিবুল হাসান। একই অভিযোগে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবরও লিখিত দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগ সূত্র ও ভুক্তভুগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খনন করা জমির আশপাশে জায়গার (জমি) বাজার দর আড়াই লাখ টাকার মধ্যে। কিন্তু রাকিবের পরিবারের কাছে ওই জমি ১০ লাখ টাকা কাঠা দাবি করেন বাছির উদ্দিন। ওই দামে জমি না কিনলে গভীর খনন করে রাকিবদের বসতঘর ঝুঁকিতে ফেলারও হুমকি দেন তিনি।

এদিকে পাকা ঘর রক্ষায় চার লাখ টাকা কাঠা পর্যন্ত দাম দিতে রাজি হন রাকিবের পরিবার। কিন্তু জমির মালিক এতে রাজি না হয়ে স্থানীয় একটি ইটভাটায় ১৪ শতাংশ জমি ১২ ফুট গভীর খনন করে মাটি বিক্রি করে দেন। এতে জমির পাশের তিন পরিবারের বসতঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। যেকোনো সময় ধ্বসে পড়তে পারে বসতঘর। এতে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন পরিবারগুলো। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো থাকার ঘর রক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে বাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জমির দাম আছে দশ লাখ টাকা কাঠা, কিন্তু তারা দিতে চায় কম। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের ছেলে ও গ্রামের পাঁচজন মিলে একটা রফা করেছিল। কিন্তু (তিন পরিবার) তারা সেটা মানেনি।’

বাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমার আগেই এটা খনন করার একটা ইচ্ছা ছিল। আমার জায়গা আমি খনন করেছি। তারাও যদি চার হাত রেখে ঘর করতো তাহলে তো সমস্যা হতো না।’ জমি না কেনায় ইচ্ছে মতো খনন করার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমার জমি আমি খনন করেছি। এখন আমি কী করতে পারি, আপনিই বলেন?’

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য রাকিব বলেন, ‘আমার বাবা দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে বাড়িটা করেছেন। এটুকুই আমাদের সম্বল। এখন থাকার ঘরটিও যেকোনো সময় ধ্বসে পড়তে পারে। বৃষ্টি হলে বিপদ আরো বাড়বে। বসতঘর ধ্বসে পড়ার ভয়ে আমরা তিন পরিবার নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।’

রাকিব আরো বলেন, ‘এর আগে জমির বাজার দরের চেয়ে তিন-চার গুন দাম দাবি করে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে হুমকি দিয়ে বলেছিল, ভেকু (এক্সকাভেটর) দিয়ে জমি খনন করে ফেলবে। কিন্তু আমাদের এতো বেশি দাম দিয়ে কেনার সামর্থ নাই। খনন করার সময় বাধা দিলে তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকির জন্য ঘর থেকে বেরই হতে পারিনি।’

জানতে চাইলে বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ বাদল বলেন, ‘এই পরিবারগুলোর সঙ্গে যা হচ্ছে, তা চরম অন্যায়। বিষয়টি জানতে পেরেই আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বাছির কারও কথা শুনছে না। সে জমির দাম বাজারদরের চাইতে অনেক বেশি দাবি করেছিল। এখন খননের কারণে যেকোনো সময় বসতঘর ধ্বসে লোকও মারা যেতে পারে। আমি তাকে ডেকে পাঠিয়ে নোটিশ করব।’

ত্রিশাল ইউএনও জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘একটি আবেদন পেয়েছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে তাৎক্ষণিক কথা বলেছি। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধান করতে বলেছি। সমাধান না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ময়মনসিংহ,মেহেদি জামান লিজন, ত্রিশাল,ত্রিশাল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close