মো. মনিরুজ্জামান, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম)

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার গনাইরকুটি

অভাবে এক দিনের সন্তানকে অন্যের হাতে দিলেন বাবা

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

এক দিন আগে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শফিকুল ইসলামের স্ত্রী। কিন্তু অভাবের সংসারে নবজাতককে ভরণ পোষণ নিয়ে শঙ্কা তারা। পরে ওই সন্তানকে গতকাল শনিবার সকালে প্রতিবেশি এক মামাত বোনের হাতে তুলে দেন শফিক।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গ সোনাহাট ইউনিয়নের গনাইরকুটি গ্রামে এই ঘটনায় ঘটে। অভাবের তাড়নায় সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আলোচনা তৈরি করেছে। তুলে দেওয়া শিশুটি শফিকুল-মরিয়ম বেগম (৩০) দম্পতির পঞ্চম সন্তান বলে জানা গেছে।

গনাইরকুটি গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল, শহিদুল ও আকবর আলী জানান, শফিকুলের নিজের কোনো জমি ও ঘরবাড়ি নেই। অন্যের বাড়িতে থাকেন। পার্শ্ববর্তী সোনাহাট স্থলবন্দরে পাথর ভাঙার কাজ করে খুব কষ্ট করে সংসার চালান। তাদের বর্তমানে তিনটি বাচ্চা আছে। সদ্য দত্তক দেওয়া সন্তানসহ দুটি কন্যাকে তিনি দত্তক দিয়েছেন।

শফিকুল ইসলাম জানান, ১৩ বছর আগে তিনি বিয়ে করেন। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। কয়েক বছর পর আরেকটি ছেলের জন্ম হয়। এরপর তার স্ত্রীর টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এর কিছু দিন পরে আরেকটি কন্যা জন্ম নিলে তাকে এক প্রতিবেশির কাছে দত্তক দেন তারা। পরের বছর চতুর্থ কন্যার বয়স এখন ৩ বছর। এদিকে গত শুক্রবার পঞ্চম সন্তান জন্ম নিলে গতকাল শনিবার সকালে প্রতিবেশী এক নিঃসন্তান মামাতো বোনকে দেওয়ার জন্য মামার হাতে তুলে দিয়েছেন।

শফিকুল বলেন, ‘আমি সোনাহাট স্থলবন্দরে পাথর ভাঙ্গা শ্রমিকের কাজ করি। আমার থাকার কোনো ঘর নাই। অন্যের বাড়িতে আশ্রিত থাকি। এই সামান্য আয় দিয়ে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা, তিন সন্তানের ভরণ পোষণ ও সংসারের খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে বুকের ধনকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছি।’

শিশুকে দত্তক নেওয়া পরিবারের সদস্য আকবর আলী বলেন, ‘আমার মেয়ে নিঃসন্তান হওয়ায় শিশুটিকে দত্তক নিয়েছি। আমার মেয়ে ঢাকায় থাকেন।’ বঙ্গ সোনাহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে শফিকুলের একটি সন্তান দত্তক দেওয়ার কথা জেনেছি। আজকের (শনিবার) তথ্য আমার জানানেই। তবে লোকটা খুব অভাবী।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম ফেরদৌস বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় সন্তান দত্তক দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’ তবে খোঁজ খবর নিবেন বলে তিনি জানান।

পিডিএস/এস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী,অভাবের সংসার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close