জামালপুর প্রতিনিধি

  ০৬ আগস্ট, ২০২২

বাহাদুরাবাদ-বালাসী লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর বাহাদুরাবাদ-বালাসীঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি চরমে পৌঁছেছে। দুই ঘাটে প্রভাবশালী ইজারাদার চক্র সৃষ্টি করে যাত্রীদের কাছে দুইশত টাকা লঞ্চ ভাড়া নিচ্ছে। কিন্তু অজুহাত ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধভাবে ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার করছে।

যাত্রীরা অভিযোগ করেন, অনুমোদিত লঞ্চের পরিবর্তে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভরা প্রমত্ত যমুনা পারি দিচ্ছেন ইঞ্জিনের নৌকায়। যে কোন সময় ভরা নদীতে নৌকা ডুবি হতে পারে এবং প্রাণহানি ঘটে যেতে পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩১ জুলাই অবৈধ ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল বন্ধের জন্য নির্দেশ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ব্রিটিশ সরকার রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যাতায়াত সুবিধার্থে ১৯৩৮ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের অধীনে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট এবং গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট রেল ফেরি চালু করে। ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় বালাসী ও বাহাদুরাবাদ ঘাট দু’টি নিশ্চিহ্ন হলে ঘাটের অবকাঠামো পরিবর্তন করতে হয়। ফলে ১৯৮৯ সালে ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি ইউনিয়নে বাহাদুরাবাদ ঘাট এবং ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাটটি সরিয়ে নিয়ে বালাসী ঘাটে স্থানান্তর করে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রেল সার্ভিস চালু রাখে। পরবর্তী সময়ে ২০০৫ সালে ১৪ জুলাই বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর রেল ট্রেন যাতায়াত শুরু হলে তৎকালীন বিএনপি সরকার ফেরি সার্ভিস সম্পুর্নরূপে বন্ধ করে দেয়।

ফলে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাথে এই লাইনে উত্তরবঙ্গের ১৩ জেলার যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাথে উত্তরাঞ্চলের ১৩ জেলার পণ্য সরবরাহ এবং যাত্রী পারাপারে ইঞ্জিন চালিত নৌকাই একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। সে সময় প্রতিবছর ভরা বর্ষার মৌসুমে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রমত্ত যমুনা পারাপার হন। ঘূর্ণিয়মান স্রোতের আবর্তে নৌকাডুবির ঘটনায় অনেক প্রাণহানি হয়েছে। এমনকি নদী পারাপার হওয়ার সময় ভরা যমুনায় দিনদুপুরেও নৌ-ডাকাতির ঘটনা ঘটে আসছিল।

বর্তমান সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দুই দফা ঘাট এলাকায় পরিদর্শন করেন। এরপর সরকার যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রায় ১শ ৩৬ কোটি টাকা ব্যয় করে দুই পাড়ে দৃষ্টিনন্দন ফেরিঘাটসহ আনুষাঙ্গিক স্থাপনা নির্মানসহ বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে বাহাদুরাবাদ ঘাট হতে ফুলছড়ির বালাসী ঘাট পর্যন্ত নৌপথ ড্রেজিং করে নৌচলাচলের উপযোগী করে তোলে। তার ধারাবাহিকতায় ৯ এপ্রিল তারিখে নৌ প্রতিমন্ত্রী যমুনার নৌপথে নতুন লঞ্চ সার্ভিস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। বর্তমানে বি আইডব্লিউটিএ ৬টি লঞ্চের অনুকূলে ৬টি সার্ভিসে রুট পারমিট, সময়সূচি জারিসহ চলাচল করছে। কিন্তু ঘাটের প্রভাবশালী সোহানুর রহমান অবৈধভাবে ইঞ্জিন চালিত নৌকাযোগে যাত্রী পারাপার করে বৈধ অনুমোদিত যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে আসছেন।

বিআইডব্লিউটিএসহ লঞ্চমালিকদের অভিযোগ, যেহেতু নৗযানগুলোর রেজিস্ট্রেশন, সার্ভে সনদ, রুটপারমিট, এমনকি সময়সূচি কিছুই নেই এবং সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। তাই যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম অবৈধ নৌযান চলাচল বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন নাহার শেফা এবং ফুলছড়ি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দিক নির্দেশনামুলক চিঠি পেয়েছি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাহাদুরাবাদ,বাহাদুরাবাদ-বালাসী লঞ্চ টার্মিনাল,যাত্রী হয়রানি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close