কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
কাউখালীতে সরকারি বই বিক্রির সময় দপ্তরি আটক
প্রাক প্রাথমিক থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ১৩ বস্তা সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার ১৪নং মধ্য সোনাকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রসনা বড়ালের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বইগুলো জব্দ করে ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায়।
জানা যায়, গতকাল বিদ্যালয় ছুটির পর এক পুরাতন বই ক্রেতা শহিদুল বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম প্রহরী মো. রেজাউল হোসেনের সহযোগিতায় ওই বই নিতে আসলে সরকারি বই বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হয়। পরবর্তীতে এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। পরে বিক্রিত বই ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার মানুষ চৌকিদারের সহায়তায় বইগুলো আটক করে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ মোতাবেক সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কে এম জামান ঘটনাস্থলে যান। সেখানে উপস্থিত থাকা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে বইগুলো জব্দ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইন্দ্রজিৎ কুন্ডুর জিম্মায় রেখে আসেন।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলা হয়। খোলার সাথে সাথেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ওই বইগুলো দপ্তরির সহযোগিতায় বিক্রির পাঁয়তারা করে। স্কুল খোলার দিন বই ক্রেতা শহীদের সাথে স্কুলে বসে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রসনা বড়াল বই বিক্রির দরদাম ঠিক করেন। গতকাল স্কুল সময়য়কালেও বই ক্রেতা শহীদ স্কুলে আসছিল। সেখানে কথা চূড়ান্ত হওয়ার পরেই স্কুল ছুটির পর দপ্তরির সহায়তায় ক্রয় করা বই নিতে আসে শহীদ। এ বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে আসলে তারা ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করে। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে স্থানীয় চৌকিদারের সহায়তায় ক্রেতার ভ্যানসহ বইগুলো আটকে দেয়। বিক্রিত বইগুলোর মধ্যে প্রাক প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পুরোনো ও নতুন বই রয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরবরাহ করা প্রয়োজনীয় অনেক বইও রয়েছে এর মধ্যে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাকিম বলেন, তিনি দাপ্তরিক মামলা-সংক্রান্ত কাজে বরিশালে ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ফোন পেয়ে সংশ্লিষ্ট সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কে এম জামানকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কে এম জামান বলেন, আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে আমি শিক্ষকবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে বইগুলো জব্দ করে কক্ষ সীলগালা করে আসি। আমি যা জেনেছি, তা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।
ইউপি চেয়ারম্যান, জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বই বিক্রির খবর পেয়ে আমি বিদ্যালয়ে যাই। বিদ্যালয়ে গিয়ে আমরা বই ক্রেতা ও দপ্তরির কথা শুনে ১৩ বস্তা বই মেম্বরের জিম্মায় রেখে আসি ।
বিদ্যালয়ের দপ্তরি রেজাউল জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে বই ক্রেতাকে গাইড বইসহ পুরানো বই, খাতা ও অন্যান্য মালামাল গুছিয়ে দিচ্ছিলাম। বই কেনা বেচার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বই ক্রেতার সাথে বেচাকেনার কথা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে। আমি তো প্রধান শিক্ষক যা হুকুম করবেন তা পালন করার দায়িত্ব আমার ।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রসনা বড়াল বই বিক্রির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, তিনি নাকি বইগুলো গুছিয়ে রুম পরিষ্কার করার জন্য দপ্তরিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
পিডিএসও/হেলাল