নিজস্ব প্রতিবেদক
কারখানা পরিদর্শনে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের দাবি ক্রেতাদের
উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের পোশাক কারখানা পরিদর্শনে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের দাবি তুলেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছেই নির্দিষ্ট সময় পর দায়িত্ব হস্তান্তর করবে সংস্থাটি। গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান জোটের কান্ট্রি ডিরেক্টর জেমস এফ মরিয়ার্টি।
মরিয়ার্টি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিধি উন্নয়নে কর্মরত উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি। আমরা নির্দিষ্ট সময় পর একটি স্বাধীন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর হাতে আমাদের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চাই। যেখানে বাংলাদেশ সরকার, আইএনও, বিজিএমইএ এবং অন্যান্য অংশীদাররা থাকবে। আমরা চলে যাওয়ার পর যাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে তারা যেন কারখানা নিরাপত্তা মনিটর করতে পারে। এ জন্য আলোচনা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি। মরিয়ার্টি বলেন, অ্যালায়েন্স, কারখানা মালিক ও আমাদের পার্টনাররা সম্মিলিতভাবে যে সাফল্য অর্জন করেছে তাতে আমরা গর্বিত। সবসময় আমাদের পরিকল্পনা ছিল ২০১৮ সালের পর আমাদের কাজের দায়িত্ব স্থানীয় কাউকে হস্তান্তর করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যালায়েন্সের সদস্য পোশাক কারখানার সংখ্যা ৭৮৫টি। তার মধ্যে সচল আছে ৬৫৮টি। তাদের মধ্যে ২৩৪টি কারখানা অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও ভবনের কাঠামোগত সব ধরনের ত্রুটি সংশোধন কর্মপরিকল্পনা (ক্যাপ) অনুযায়ী শেষ করেছে। তবে সংস্কারকাজে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় ১৬২টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে অ্যালায়েন্স। এ জন্য পোশাক কারখানাগুলো জোটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ওয়ালমার্ট, টার্গেট, গ্যাপ, জেসিপ্যানিসহ ২৯ ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরির ক্রয়াদেশ পাচ্ছে না।
আরো জানানো হয়, অ্যালায়েন্সের ৬৫৮টি সদস্য কারখানায় কাজ করেন ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৫৬৬ পোশাকশ্রমিক। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশকেই প্রাথমিক অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রায় ২৭ হাজার নিরাপত্তাকর্মীকে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে অ্যালায়েন্স। এ ছাড়া শ্রমিকদের জন্য হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেই হেল্পলাইনে নিজেদের সমস্যা ও অভিযোগ জানাতে পারছেন।
অনুষ্ঠানে জেমস এফ মরিয়ার্টি বলেন, ‘২০১৩ সালে অ্যালায়েন্স কাজ শুরু করে। সেই সময়ের তুলনায় পোশাক কারখানাগুলো আজ অনেক বেশি নিরাপদ। কারখানা মালিকেরা যে কঠোর পরিশ্রম করছেন, তার সুফল তারা এখন পাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, কারখানাগুলো যে আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে পাঁচ বছরের জন্য অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। উভয় জোটের অধীনে দুই হাজারের বেশি কারখানার অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও ভবনের কাঠামোগত পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে।
অ্যালায়েন্স অধিভুক্ত ২৩৪টি করখানা সংশোধনী কর্ম পরিকল্পনায় মেরামত কাজ সম্পন্ন করেছে জানিয়ে জেমস এফ মরিয়ার্টি বলেন, আমাদের মেরামত কাজের ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে ৮০ শতাংশ উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেরামত কাজ (যেমন: ফায়ার ডোর স্থাপন এবং কলাপসিপল গেট সরিয়ে ফেলা) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাকি কাজগুলো ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
"