নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ অক্টোবর, ২০২১

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে

দীর্ঘদিন জোয়ারের পর সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে এবার ভাটার টান পড়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্বস্তি থাকলেও স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। বিগত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ বেশি হলেও চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে তা অনেকাংশে কমে গেছে। এ সময়ে ৫ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৮ শতাংশ কম। গত বছর জুলাই মাসে ৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগে সরকার সম্প্রতি বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এছাড়া মহামারি করোনার কারণে মানুষের আয় এবং সঞ্চয় দুটোই কমেছে। সব মিলিয়ে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগও কমেছে। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারকে কম ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝাও কমে আসবে। তাদের মতে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর সুদের হার কমানো ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় ছিল না। এখন বিক্রি কমে আসবে, সরকারকেও বেশি সুদ পরিশোধ করতে হবে না। এদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো এবং অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপের ফলে অস্বস্তিতে পড়েছেন এ খাতের বিনিয়োগকারীরা। কেননা এমন অনেকেই আছেন যারা শুধু সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভর করেই পুরো মাসের ব্যয় পরিচালনা করেন। তারা বলেন, সরকারের এসব সিদ্ধান্তের ফলে আমাদের জীবনযাপন আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই মাসে মোট ৫ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে পরিশোধ হয়েছে ৩ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। মূল অর্থ পরিশোধের পর অবশিষ্ট অর্থ নিট বিক্রি হিসেবে গণ্য হয়। সেই হিসাবে আলোচিত সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। আগের বছরও এ সময় নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির জন্য প্রতি বছর বাজেটে সরকার লক্ষ্য ঠিক করে দেয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্যের চেয়ে বিক্রির পরিমাণ অনেক অনেক বেশি হয়। সবশেষ গত ৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, যা গেল অর্থবছরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এ লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এর ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে সরকার। সবশেষ বাজেটে ২ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র শুধু সঞ্চয় অধিদপ্তরেই পাওয়া যাবে। চলতি বছরের ১৮ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) থেকে জানানো হয়, এখন থেকে তফসিলি ব্যাংকের শাখা বা ডাকঘর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। শুধু জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন সঞ্চয় ব্যুরো থেকে এ সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সেজন্য গত ২২ সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের সুদের কমিয়ে দিয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম সুদের হার, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম হার এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেক রকম হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হারে সরকার হাত দেয়নি। অর্থাৎ আগে যে হারে সুদ পাওয়া যেত, এখনো সেই হারে পাওয়া যাবে। এর আগে ২০১৫ সালের ২৩ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার গড়ে ২ শতাংশের মতো কমিয়েছিল সরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close