দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মেহেরপুরের কুচিয়া রফতানি হচ্ছে ১৫টি দেশে

দেশের বেশির ভাগ মানুষই কুচিয়া খায় না। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে কুচিয়া মাছের ব্যাপক চাহিদা। এ কারণে রফতানির জন্য বাণিজ্যিকভাবে কুচিয়া চাষ হচ্ছে মেহেরপুরে। সেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা কুচিয়া মাছ যাচ্ছে চীন, জাপান, হংকং, মঙ্গোলিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায়, দক্ষিণ কোরিয়াসহ প্রায় ১৫টি দেশে।

সাপের মতো দেখতে হলেও কুচিয়া এক ধরনের মাছ। এর রয়েছে বিভিন্ন নাম কুচে, কুচে মাছ, কুচিয়া, কুইচ্চা বা কুচে বাইম। এটি একটি ইল প্রজাতির মাছ। Sybranchidae পরিবারের অন্তর্গত এই মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Monopteruscuchia। কুচিয়া সাধারণত কাদা মাটিতে থাকে। কাদা খুঁড়ে খুঁড়ে এগুলো সংগ্রহ করতে হয়। এই মাছ সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও এই মাছ অনেকে খেয়ে থাকেন।

‘কুচিয়া চাষ খুবই সহজ। বাড়ির পাশে মাত্র ৩০ গুণ ১০ ফিট জায়গায় কৃত্রিম পুকুর করে কুচিয়া চাষ করা যায়। ওই পুকুরের পানির নিচে মোটা পলিথিন জাতীয় কিছু দিতে হয়। তার ওপরে কাদা পরিমাণ মতো। কারণ কুচিয়া সাধারণত কাদা মাটিতে থাকে। পানির ওপরে দিতে হয় কচুরিপানা বা তালপাতা। এছাড়াও পাকা ড্রাম পদ্ধতিতে কুচিয়ার প্রজনন ও চাষ করা যায়।

মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামের পিছিয়ে পড়া ৫২ জন কৃষক ডিচ পদ্ধতিতে কুচিয়া মাছ চাষ করছেন। সদর উপজেলার গুচ্ছগ্রাম, বাড়িবাকা, উজ্জ্বলপুর, বৈকুণ্ঠপুরসহ মুজিব নগরের কয়েকটি গ্রামে কুচিয়া চাষ বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে।

পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন দারিদ্র্যবিমোচন সংস্থা (ডিবিএস) কুচিয়া চাষ করছে। প্রাকৃতিক উপায়ে কুচিয়ার বংশবিস্তারের সুযোগ এবং পরিবার ভিত্তিক কুচিয়া খামার স্থাপনের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে ৫২ জন দরিদ্র কৃষককে বাছাই করে তাদের এই মাছ চাষে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। কৃষক তাদের দেখানো পথে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেছেন কুচিয়া মাছ চাষ। এরই মধ্যে কুচিয়া রফতানি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। গুচ্ছ গ্রামের তাহাজ উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন, বাড়িবাকা গ্রামের আঃ সামাদ এবং উজ্জ্বলপুর গ্রামের ইয়াসিন আলী কুচিয়া চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলাতেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কুচিয়া মাছ চাষ হচ্ছে।

কুচিয়া চাষি ফকরুল ইসলাম জানান, ১২ বাই ২৪ ফুটের একটি ডিচ তৈরি করে প্রাকৃতিক পুকুরের পরিবেশে চাষ করা হচ্ছে। প্রতিটি ডিচ খনন, কুচিয়া মাছের পোনা বাবদ খরচসহ ৬ মাস খাবার দিয়ে সব মিলিয়ে একটি ডিচে খরচ হবে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। ৬ মাস খরচ শেষে স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেই আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে। তিনি আরো জানান স্থানীয় আড়ৎদাররা ১২০০ টাকা কেজি দরে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। এই মাছের প্রধান খাবার হচ্ছে জীবন্ত পোকামাকড় এবং ছোট ছোট মাছ।

মেহেরপুর জেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামন মানিক বলেন, কুচিয়া মাছ একটি চমৎকার খাদ্যমান সম্পন্ন সুস্বাদু মাছ। আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে, দেশের আদিবাসী এলাকার মানুষের মধ্যে এই মাছের ব্যাপক চাহিদা।

দারিদ্র্যবিমোচন সংস্থার (ডিবিএস) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাফর হোসেন বলেন, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সাপোর্টে তিন বছর মেয়াদে ৫২ জন চাষিকে নিয়ে এই প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব কুচিয়া বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close