নিজস্ব প্রতিবেদক
নতুন মুদ্রানীতি সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়
মন্তব্য অর্থনীতিবিদদের
পণ্যমূল্য উসকে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেবে নতুন মুদ্রানীতি। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে আশার প্রতিফলন নেই বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিদ্যমান ধারায় এগিয়ে নিতে যে ধরনের প্রণোদনা এবং টার্গেট স্থির করার দরকার ছিল তা যথাযথভাবে হয়নি। বরং সংকোচনমূলক নীতির বহুমুখী প্রভাবে বাজারে পণ্যমূল্য বাড়বে। বেড়ে যাবে ব্যাংকঋণের সুদের হারও; যা দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় প্রায় সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল।
নির্বাচনী বছরে কেন এ ধরনের একটি মুদ্রানীতি সে প্রশ্নও রেখেছেন অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ। তাদের মতে, নতুন নীতির ফলে আমানতের সুদের হার যদি বেড়ে যায়, তা ঋণের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ঋণের সুদ হার বেড়ে গেলে বিদ্যমান জ্বালানি সংকটের মুখে উৎপাদন খাতে স্থবিরতা নেমে আসতে পারে। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলেও তারা মনে করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মুহূর্তে যা দরকার ছিল তা ঘোষিত মুদ্রানীতিতে অনুপস্থিত। এই নীতি সাধারণ নির্বাচনের আগে মূল্যস্ফীতি বাড়াবে। একই সঙ্গে বাড়াবে সুদের হার; যা ফলপ্রসূ কিছুর ইঙ্গিত দেয় না।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। এ অবস্থায় ঘোষিত মুদ্রানীতির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। বরং সুদের হার যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে মূল্যস্ফীতিও। তিনি বলেন, ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে একই হারে আমানতের প্রবৃদ্ধিও ঘটাতে হবে। তা কিন্তু হচ্ছে না। এটা নতুন মুদ্রানীতির বড় চ্যালেঞ্জ। শেয়ারবাজারের জন্যও নতুন মুদ্রানীতিতে কোনো সুখবর নেই। কারণ, নতুন নীতি অনুযায়ী এক্সচেঞ্জ রেট বাড়বে। যা শেয়ারবাজারের জন্য ভালো নয়। সুদের হার বৃদ্ধি ডলারের বিপরীতে টাকার অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, নতুন মুদ্রানীতি খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বাড়াবে। প্রবৃদ্ধির সুফল সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ব্যাংকিং খাত সুদৃঢ়করণ ও প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করার মতো পরিকল্পনা ঘোষিত মুদ্রানীতিতে দেখা যাচ্ছে না। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতি রেখে গবেষণাকেন্দ্রিকও করা হয়নি। এমনকি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে মনে হয় উপেক্ষাই করা হয়েছে। নির্বাচনের বছর হলেও সে বিষয়টি মাথায় রাখা হয়নি। এমনকি ঘোষিত মুদ্রানীতির সঠিক বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনাও নেই।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় ষান্মাসিক মুদ্রানীতি গতকাল ঘোষণা করা হয়। এতে বেসরকারি খাতে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ জোগানের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এই মুদ্রানীতিকে উৎপাদনমুখী ও প্রবৃদ্ধিবান্ধব বলে আখ্যা দিয়েছেন।
"