প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় ক্ষমা চেয়ে পিএইচডির জন্য তিন বছরের জায়গায় এক বছরের শিক্ষা ছুটিতে যাওয়ার অনুমতি পেলেন শিক্ষক শক্তি চন্দ্র মন্ডল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শক্তি চন্দ্রের দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার কথা ছিল গত বৃহস্পতিবার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে অনুমতি না দেওয়ায় ওইদিন তিনি অনশন শুরু করেন। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়।

জানা যায়, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে পাঁচজন শিক্ষককে পিএইচডি করার স্কলারশিপ দিয়েছে কোরিয়া সরকার। তাদের একজন অধ্যাপক শক্তি চন্দ্র মন্ডল। তিনি বলেন, দুই মাস আগে আমি কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর ৬ আগস্ট জিও (সরকারি আদেশ) ও ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য হাবিপ্রবির ভিসি বরারবর আবেদন করি। ছাড়পত্র ও সংশোধিত জিও না দেওয়ায় আমি কোরিয়ায় যেতে পারছিলাম না। আমার ফ্লাইট ছিল বৃহস্পতিবার। এরই মধ্যে আমি হাবিপ্রবির একটি চিঠি পাই। যেখানে বলা হয়, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় আমাকে জিও দেওয়া হচ্ছে না। এর যথাযথ ব্যাখ্যা দেওয়ার পর বিদেশে যাওয়ার অনুমতিসহ জিও দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

তিনি বলেন, আমাকে বিদেশে যেতে না দিলে আমার ক্ষতির পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এছাড়া আগামীতে বাংলাদেশ থেকে স্কলারশিপ বন্ধও করে দিতে পারে কোরিয়ান সরকার। তাই আমি একাধিকবার ভিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে জিও দেওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু আমাকে জিও দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইলে জিও দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এতে বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনশন শুরু করি। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে বিশ্বববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করি।

এ ব্যাপারে জানতে হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ডা. ফজলুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখা সব শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্ব। শক্তি চন্দ্র মন্ডল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এসব অভিযোগের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। ব্যাখ্যা দিয়েই তিনি বিদেশ যাওয়ার অনুমতিসহ জিও পেতে পারেন না। পরে তিনি লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করায় তাকে এক বছরের জন্য অনুমতিসহ জিও দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তার কর্মকান্ড বিবেচনা করে তা বর্ধিত করা হবে।

জানা গেছে, তিনি গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার ফ্লাইটে কোরিয়ার উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে রওনা দিয়েছেন এবং তিনি সেখানে পৌঁছে গেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করেছেন। প্রসঙ্গত, ২৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রশাসনে জামায়াতীকরণ এবং বিতর্কিত ও আঞ্চলিকতামূলক সিদ্ধান্তের কারণ দেখিয়ে সাতজন শিক্ষক তাদের প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে চিঠি দেয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহকারী প্রক্টর সৌরভ পাল চৌধুরী, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সহকারী হল সুপার ফরিদুল্লাহ এবং ডরমিটরি-২ এর সহকারী হল সুপার শক্তি চন্দ্র মন্ডলকে তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। এছাড়া সংবাদ সম্মেলন করা, প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদান করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তকর তথ্য প্রকাশ করায় কারণ দর্শাতে বলা হয়।

"