reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

শফিক শাহরিয়ারের হাসির গল্প

পদোন্নতি

ছোটবেলা আপনি, তুমি, তুই শব্দগুলোর পার্থক্য অন্যভাবে বুঝতাম। এখন সেভাবে আর বুঝি না। পার্থক্য আছে ঠিক ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হয়। স্থান-কাল-পাত্রভেদে শব্দগুলোর পার্থক্য পরিবর্তনশীল। বড় হয়ে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। সাধারণত সমবয়সিদের তুমি তুমি করেই ডাকতাম। পারিবারিক ডাক-হাঁক সম্পূর্ণ আলাদা। আপনি, তুমি, তুই এসবে কিছু যায় আসে না। সম্পর্ক কতটা গভীর হয়ে ওঠে সেটাই প্রধান বিষয়। চাচাতো ভাই মিলু। সে আমার জুনিয়র। বয়সে সিনিয়র হলেই তাকে আপনি করে ডাকতে হয়। অবশ্য এ ধরনের ধরাবাঁধা নিয়ম তোয়াক্কা করি না। আমরা বন্ধুর চেয়েও বেশি ফ্রি ছিলাম। একে অপরকে তুই তুই করে ডাকতাম। ডাকহাঁক মানুষের অভ্যাসগত ব্যাপার। বংশগত দাবি নিয়েই সে আমাকে আপনি না বলে তুই বলে ডাকে। যেখানে তুই শব্দটি মানানসই, সেখানে আপনি শব্দটি বেমানান। বাড়িতে আমার বন্ধুরা কেউ বেড়াতে এলে মিলু তেমন মিশত না। কেউ ডাকলে সে কাঁপা কাঁপা গলায় আপনি বলেই সাড়া দেয়। গ্রামের কলেজ থেকে পাস করে শহরে এলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। তবু সে আমাকে তুই করেই ডাকে। আসলে তুই ডাকটি মনের ভেতর থেকেই আসে। কখনো জোর করে কাউকেই আপনি ডাকা সহজ নয়। অবশ্য তুই করে ডাকতে কখনো তাকে বারণ করিনি। ফেসবুকের কল্যাণে এখন মেসেঞ্জারে নিয়মিত কথা হয়, ভিডিও কল দিই। মিলু কিছুদিন থেকে অতিক্রমকে ব্যতিক্রম করছে। ব্যাপারটা আমি বেশ ভালোভাবেই খেয়াল করছি। এক দিন তাকে বললাম, এসব কী হচ্ছে? কথাটি শোনামাত্র সে বোকার রাজ্যে। আমি তখন চালাক রাজ্যে গেলাম। সে চাকরি পেয়েছে, কিন্তু কাউকেই মিষ্টিমুখ করানোর সুযোগ পায়নি। এমনকি আমাকেও না। অফিসের কাজের চাপে আমার সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। তাকে কৃপণ বলার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। এক দিন তাকে বললাম, আপনি শব্দের মাহাত্ম্য কী? সে বলল, অফিসের সবাই আমার সিনিয়র। সবাইকে আপনি আপনি করেই ডাকার অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন চাইলেও সিনিয়রদের তুই করে ডাকতে পারি না। তুই করে ডাকবই বা কেমন করে? অভ্যাসের বরখেলাফ হবে। ওরা কেউ আমার মুখে তুই ডাকটি শুনতে চায় না। তাই অনেক ভাবনাচিন্তা করে বড় ভাইকেও আপনি করেই ডাকছি। অবশেষে বুঝলাম, আমার পদোন্নতি হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close