মাদারীপুর প্রতিনিধি
বছরেও উদ্বোধন হয়নি বাস টার্মিনাল বিদ্যুতের অভাবে
মাদারীপুরে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণের এক বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগসহ নানা জটিলতায় টার্মিনালটি চালু করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে এখানো শেখ হাসিনা মহাসড়কের দুপাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো।
এদিকে টার্মিনালে ঢুকতে না পারায় মহাসড়ক থেকে যাত্রী তুলছেন বাসচালকেরা। এতে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া মহাসড়কের পাশে বাস পার্কিংয়ের কারণ অন্য যানবাহনের যাতায়াত চলাচল ও পথচারীদের হাঁটাচলায় ব্যহত হচ্ছে।
মাদারীপুর পৌরসভা কার্যালয়ের সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় পৌর এলাকার গৈদি মৌজার পাকদী এলাকায় চার একর ৩৭ শতাংশ জায়গা ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় অধিগ্রহণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালের নভেম্বরে তিন তলা বিশিষ্ট আধুনিক বাস টার্মিনালটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ফরিদপুরের আলাউদ্দিন ট্রেডিং কোং লিমিডেট নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। প্রথম পর্যায় বাস টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। পরে নকশা কিছুটা পরিবর্তন করা হলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার ১৭৭ টাকায়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে তিন দফায় তিন বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ৩০ এপ্রিল মেয়াদে বাস টার্মিনালটি নির্মাণ শেষ হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আলাউদ্দিন ট্রেডিংয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলুর হক বলেন, বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সবকিছুই শেষ। বিদ্যুৎ সংযোগ ও ইলেক্ট্রিসিটির কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। তাই মৌখিকভাবে আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বকেয়া বিল নিয়ে পৌরসভার সঙ্গে ঝামেলা থাকায় এখনো সংযোগ দিচ্ছে না বিদ্যুৎ বিভাগ।
বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আকৃতির আধুনিক বাস টার্মিনালের প্রবেশ পথে তালা। এ কারণে রোদণ্ডবৃষ্টির মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। টার্মিনালের ভিতরে নেই কোনো যানবাহন। এর সামনে মহাসড়কের দুপাশে সারি দিয়ে রাখা হয়েছে দূরপাল্লার বাসগুলো। অস্থায়ী কাউন্টারগুলো টার্মিনালের সামনে চেয়ার টেবিল বসিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
মাদারীপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার কামরুল হাসান বলেন, বর্ষাকালে বাসগুলো রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা যায় না। দুর্ঘটনার ভয়াবহ ঝুঁকি থাকে। টার্মিনাল চালু না থাকায় যাত্রীরাও চরম দুর্ভোগ পোহান। এটি চালুর জন্য আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মিলছে না।
জানতে চাইলে মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবুল কালাম বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ দিচ্ছে না। এ কারণে আমরা টার্মিনাল উদ্বোধন করতে পারছি না। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে মেয়র একাধিকবার মিটিং করেছেন। আমরা আশাবাদী, শিগগিরি টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে মাদারীপুর পৌরসভার অধীনে থাকা ২১টি মিটারে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া দাবি করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল উল্লেখ করে মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ওই বছরই জুলাই মাসে আদালতে একটি মামলা করেন। এই মামলাটি আদালতে এখনো চলমান।
জানতে চাইলে মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার আবু আহমদ ফিরোজ ইলিয়াস বলেন, আমাদের ২১টি মিটারের বিল বকেয়া ছিল। ইতোমধ্যে একটি বিল যাচাই-বাছাই করে পরিশোধ করা হয়েছে। তা ছাড়া মামলা তো চলছেই। আর আধুনিক বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরেই আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ দিবেন।
জানতে চাইলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, এক বছর আগে পৌরসভা থেকে টার্মিনালে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে একটি চিঠি দিয়েছিল। সেখানে বলেছিল, টার্মিনালে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন। কিন্তু এভাবে চিঠি দিলেই তো আর সংযোগ দেওয়া সম্ভব না। আমরা ফিরতি চিঠি দিয়ে বলেছি, যথাযথ ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া মেনে পূর্ণাঙ্গ আবেদন করলে আমরা সংযোগ দেব। কিন্তু তারা আবেদন করেন নাই।
"