খাদেমুল ইসলাম, বাগাতিপাড়া (নাটোর)

  ২৩ মার্চ, ২০২৩

বাগাতিপাড়া মহিলা মাদরাসা

নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী, উপবৃত্তির টাকা তোলেন মাদরাসা সুপার

* পাঁচ বছর ধরে কোনো শিক্ষার্থী নেই * প্রতিবার পরীক্ষায় দেখানো হচ্ছে শিক্ষার্থী * প্রতিবাদ করলেই চাকরিচ্যুতির হুমকি * ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ

চারদিকে ফসলি জমি। মাঝখানে আট কক্ষের টিনের দোচালা ঘর। তিনটি কক্ষে ঝুলছে তালা। কয়েকটিতে ধানের খড় রাখা হয়েছে। দরজা-জানালা ভাঙা অধিকাংশ ঘরের। ভাঙা বেঞ্চ ও টেবিলে ধুলার আস্তর।

এ অবস্থা নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বাগাতিপাড়া মহিলা দাখিল মাদরাসার। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে সেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নেই। তার পরও শিক্ষার্থী দেখিয়ে বছরের শুরুতেই বই বিতরণসহ উপবৃত্তির টাকা তোলেন মাদরাসা সুপার আবদুর রউফ।

জানা গেছে, ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটিতে পাঁচ বছর ধরে কোনো শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নেই। কাগজে-কলমে যারা এখনো কর্মরত, তাদের কেউই প্রতিষ্ঠানে আসেন না। এ সুযোগে অনিয়ম করে যাচ্ছেন মাদরাসা সুপার। এর প্রতিবাদ করলেই চাকরিচ্যুত করা হয় শিক্ষকদের। ইতিমধ্যে দুজনকে অপসারণ করা হয়েছে। তাদের একজন মাদরাসার অফিস সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু। তিনি ওই সুপারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন।

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত বছর ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন একজন অভিভাবক।

মাদরাসার অফিস সহকারীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসা সুপার শিক্ষার্থীর ভুয়া তালিকা করে উপবৃত্তির টাকা তুলে আত্মসাৎ করে আসছেন। এ জন্য মোবাইল ফোনের একাধিক সিম কার্ড ব্যবহার করেন তিনি। একইভাবে ভুয়া তালিকা করে তিনি নতুন বছরের বইও তুলেছেন।

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর কয়েকজন অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিভাবকদের মধ্যে মতিউর রহমান গত বছর ইউএনওর কাছে মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের দাখিল পরীক্ষার জন্য বাগাতিপাড়া মহিলা দাখিল মাদরাসায় ১৫ জনের রেজিস্ট্রেশন করানো হয়। কিন্তু কেউ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ২০২২ সালেও আটজনের নাম দেওয়া হয় পরীক্ষার্থী হিসেবে। তারাও পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, মাদরাসা সুপার তালিকা করে বইসহ উপবৃত্তির টাকা তুলছেন। বিষয়টি জানার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এখনো প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী বা শিক্ষক নেই। মাদরাসা সুপারও সেখানে নিয়মিত যান না। তিনি উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের গালিমপুর কৃষ্ণপুর মসজিদে ইমামতি করেন।

অভিযোগ বিষয়ে আবদুর রউফের সঙ্গে কথা বলতে গত মঙ্গলবার তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। আবদুর রউফ বলেন, ‘একটি পক্ষ মাদরাসাটি বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। তাদের মধ্যে অফিস সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান মিঠুও রয়েছেন। অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করব।’ কিছুক্ষণ পর জোহরের নামাজের কথা বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

গালিমপুর কৃষ্ণপুর মসজিদ কমিটির সভাপতি সোহেল রানা বলেন, বাগাতিপাড়া মহিলা দাখিল মাদরাসার সুপার আবদুর রউফ দুই বছর ধরে ইমামতি করেন। তবে তার মাদরাসা চালু না থাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহাদ আলী জানান, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পুরো প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাগাতিপাড়া ইউএনও নিলুফা সরকার জানান, কর্মস্থলে সম্প্রতি যোগদান করায় বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে অভিযোগ পেলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close