নুরুল করিম আরমান, লামা (বান্দরবান)

  ০৩ অক্টোবর, ২০২২

লামায় খাবারের তালিকায় কোঁড়ল, কমছে বাঁশ সম্পদ

মূলত বাঁশের গোঁড়ার কচি নরম অংশকে বলা হয় বাঁশ কোঁড়ল। পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের খাদ্য তালিকার মধ্যে অন্যতম সবজি হিসেবে রয়েছে এ বাঁশ কোঁড়ল। বর্ষা শুরু হলেই বাগানে জন্ম নেয় নতুন নতুন বাঁশ কোঁড়ল। এসব বাঁশে পরিণত হওয়ার আগেই প্রতিদিন বাজারে বিক্রি হয়। পাহাড়ের প্রায় সব স্থানেই মেলে এ সবজি। এটির আবার স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ঔষধী গুণও রয়েছে প্রচুর।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের পাশাপাশি বাঙালিরাও এখন বাঁশ কোঁড়ল খেতে শুরু করায় এখন দিন দিন এর উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। গত কয়েক বছরে পাহাড়ি উপজেলায় প্রায় কোটিরও বেশি বাঁশ অংকুরেই ঝরে পড়েছে বলে অভিজ্ঞমহলের ধারণা। এ কোঁড়ল নিধন অব্যাহত থাকলে আগামি কয়েক বছরের মধ্যেই এতদ্বঞ্চল থেকে বাঁশ সম্পদ একেবারেই হারিয়ে যাবে।

জানা গেছে, পাহাড়ে কয়েক প্রজাতির বাঁশ জন্মে। এর মধ্যে রয়েছে মুলি, দুলু, মিটিঙ্গা, কালি ও ছোটিয়া। এর মধ্যে মুলিবাঁশ বেশি জন্মায়। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই আস্তে আস্তে বাঁশ বাগানগুলোতে জন্ম নিতে শুরু করে কোঁড়ল। জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস বাঁশের বংশ বৃদ্ধির মৌসুম। এটির নাম বাঁশ কোঁড়ল হলেও এটি সবজি হিসেবে খেতে খুবই সুস্বাদু বিধায় বর্তমানে উপজাতিদের পাশাপাশি এখানকার অনেক বাঙালিরাও এ কোঁড়ল খাওয়ার অভ্যাস করেছেন।

লামা পৌর এলাকাসহ তিন পার্বত্য জেলার সকল উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে এখন বাঁশ কোঁড়ল বিক্রি হয়। উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা থেকে উচিনু মার্মা সপ্তাহে ৩-৪ দিন বিক্রির জন্য লামা বাজারে ১৫০-২০০টি হারে বাঁশ কোঁড়ল নিয়ে যান। প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ৬০ টাকা। গজালিয়া ইউনিয়নের উওয়াংচিং মার্মানিও বাজারে প্রায় প্রতিদিন একই পরিমাণ বাঁশ কোঁড়ল বিক্রি করেন সংসার চালানোর তাগিদে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত চার বছর আগে পার্বত্য জেলায় বাঁশে ফুল আসে ও মড়ক সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি ইঁদুর ও বন্যা দেখা দেয়। ফলে একদিকে বাঁশ বাগানে মড়ক অন্যদিকে ইঁদুরও বাঁশ বাগান নষ্ট করে ফেলে। এতে বাঁশের উৎপাদন কমে যায়। রাতারাতি বাঁশের দাম বেড়ে গিয়ে প্রতি হাজার ১৮-২০ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। সেই সময় অনেক মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ ঘর মেরামত কিংবা নতুন বাঁশের ঘর তৈরি করতে সাহস পায়নি। প্রাকৃতিকভাবে বাঁশে মড়ক লাগার দুবছরের মধ্যে আবার বাঁশের উৎপাদন শুরু হয়। গত বছর প্রতি হাজার মুলি বাঁশের দাম ছিল ১০-১১ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক বেলাল জানান, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস হচ্ছে বাঁশ জন্মানোর মৌসুম। এ সময় বাঁশ কোঁড়ল সংগ্রহের ফলে বাঁশ উৎপাদন কমে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকা থেকে কাউকে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করতে দেয়া হয়না। বরং এ বিষয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিট কর্মকর্তা ও ভিলেজারদের মাধ্যমে স্থানীয়দেরকে সচেতন করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close