রফিকুল ইসলাম রনি, চাটমোহর (পাবনা)

  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

শামুক যাচ্ছে মাছের খামারে

পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিল অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকার বিল অঞ্চলে অবাধে চলছে শামুক ও ঝিনুক নিধন। এখন ভরা বর্ষা, বিলে পানি থই থই করছে, স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীরা প্রতিদিন বিল থেকে শামুক সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। উন্মুক্ত জলাশয়ের প্রাকৃতিক ফিলটার হিসেবে পরিচিত এসব জলজ প্রাণী নিধনের ফলে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। জলাশয়ের মাছ, মাটি ও পানিতে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে বিল অঞ্চল থেকে ব্যাপক হারে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়। জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাস চলে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহের কাজ। পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার নদ-নদী, ছোট-বড় বিলসহ ২০-৩০টি স্থানে প্রায় ৪০০ নৌকায় স্থানীয় লোকজন প্রতিদিন শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করছেন।

একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র শামুক সংগ্রহের জন্য স্থানীয় দরিদ্র চাষি ও মৎস্যজীবীদের ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা দিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন টন শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একজন ব্যক্তি এক থেকে দুই বস্তা শামুক সংগ্রহ করে থাকেন। প্রতি বস্তা শামুক বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। স্থানীয় ব্যাপারীরা এই শামুক ক্রয় করে খুলনাসহ দক্ষিণ অঞ্চলের মাছের খামারগুলোতে খাদ্য হিসেবে বিক্রি করছেন। চলনবিলে প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকার শামুক বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

উপজেলার ধানকুনিয়া গ্রামের শামুক সংগ্রহকারী কোরবান আলী, আসাদ ও সুজন জানান, বর্ষার সময়ে তাদের কাজ থাকে না, চাষাবাদ বন্ধ থাকে, পেটের দায়ে স্থানীয় শামুক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা নিয়ে তারা শামুক সংগ্রহ করেন। শামুক সংগ্রহ করে প্রতিদিন জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন বলে জানান তারা।

চাটমোহর উপজেলার বোথর গ্রামের শামুক ও ঝিনুক ব্যবসায়ী জগদিশ চুর্নকর জানান, এ ব্যবসায় প্রায় ২৫ বছর ধরে সম্পৃক্ত আছেন। চাটমোহরের ভাদুদগর, হাদল, ধানুয়াঘাটা, বনগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। স্থানীয় সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে শামুক কিনে পাইকারিভাবে বিক্রি করেন তারা। বর্ষার তিন-চার মাস শামুক কেনাবেচা হয়।

উপজেলার ধানকুনিয়া গ্রামের ঝিনুক ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের চিংড়ি খামারিদের কাছে শামুক বিক্রি করি। পাইকারিভাবে কিনে ট্রাকযোগে নিয়ে যান তারা। তবে এ ব্যবসা বৈধ না অবৈধ বিষয়টি আমরা জানি না।

চাটমোহর উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শামুক জলজ প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়। এই আইন অমান্য করে চলছে শামুক নিধন। শামুক সংগ্রহরের অপরাধে জেলসহ অর্থদ-ের বিধান থাকলেও আইন প্রয়োগ না হওয়ার কারণে থামছে না শামুক নিধন।

তিনি আরো বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ের বিশেষ করে খাল, বিল, হাওর-বাওড়ে বংশবিস্তার করে থাকে শামুক ও ঝিনুক। অপরদিকে জলাশয়ের নোংরা পানির পোকামাকড় আহার করে পানি বিশুদ্ধকরণের কাজ করে। উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধকরণসহ স্থানীয় মিঠা পানির মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে শামুক।

তিনি আরো বলেন, বর্ষার শেষে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাণীগুলো বেশির ভাগ মারা যায়। তখন শামুক ও ঝিনুক কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে, শামুকের খোলশ ক্যালশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। নির্বিচারে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ বন্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

ইউএনও সৈকত ইসলাম বলেন, শামুক ঝিনুক ধরা আইনত অপরাধ, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্যাম্পেইন করতে হবে। অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close