শাহাদাত হোসেন মনু, ঝালকাঠি

  ১২ আগস্ট, ২০২০

১০ দিনেও বিক্রি হয়নি চামড়া বিপাকে ঝালকাঠির ব্যবসায়ীরা

ঈদুল আজহার পর ১০ দিন অতিবাহিত হলেও কোরবানির পশুর ক্রয়কৃত চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন ঝালকাঠির চামড়া ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি মালিকদের কাছে আগের পাওনা টাকা না পাওয়ায় পুঁজি সংকট, লবণের দাম বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজার মন্দা হওয়ায় এবারের ঈদে চামড়া বিক্রি নিয়ে এখনো নানা শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

এদিকে গত বছরের কোরবানির পশুর চামড়ার টাকা এখনো ট্যানারি মালিকের কাছে বকেয়া পড়ে আছে। এতে নিজেদের অল্প পুঁজি নিয়ে চামড়া ক্রয় করেছেন ব্যবসায়ীরা। এসব ঝামেলার কারণে গত ১০ বছরে ৫ ভাগের ১ ভাগ ব্যবসা চামড়ার কারবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।

চামড়া ব্যবসায়ী মো. উজ্জ্বল সরদার। তিনি জানান, প্রতি কোরবানির ঈদে এখানে প্রায় ১ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়। ২০১০ সালেও জেলায় প্রায় অর্ধশত চামড়া ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে সময়মতো টাকা না পাওয়ায় ঋণে জর্জরিত হয়ে আবার অনেকে লস খেয়ে দেউলিয়া হয়ে শুধু মাংস ব্যবসায় সীমিত আছেন। বর্তমানে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। গত বছরের চামড়া দাম এখনো ট্যানারি মালিকরা পরিশোধ না করায় এবার ঈদে চামড়ার কেনার জন্য ঋণ-কর্জ করে কিনেছি।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এখনো সেই টাকা পাওয়া যায়নি। অপরদিকে বকেয়া টাকা ফেরত দেওয়া লাগবে বিধায় এ বছরের চামড়াও কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তারা বলেন, কোরবানি পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। এবার লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪০ টাকা দরে ক্রয় করা হবে। খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কোনোটিই বাস্তবতার আলোকে ঠিক হয়নি। অনেক চামড়ায় ডিসফুট (নি¤œমানের) থাকে। নির্ধারিত রেটে ওই চামড়া কিনে বিক্রি করা সম্ভব নয়। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে মৌসুমভিত্তিক কিছু চামড়া ব্যবসায়ীর সৃষ্টি হয়। তারা স্থানীয়ভাবে নিজেদের ইচ্ছামতো দরদামে চামড়া ক্রয় করে আমাদের কাছে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে।

ঝালকাঠিতে একসময় অর্ধশত চামড়া ব্যবসায়ী থাকলেও কখনো সমিতি গড়ে উঠেনি। মূলত কিছু ব্যক্তি উদ্যোগী হয়ে চামড়ার কারবারে যুক্ত হলেও লাইসেন্স করেননি। লাইসেন্স আছে কেবল কাদের খান নাম ব্যক্তির। ব্যক্তি উদ্যোগে কেনা চামড়া তার কাছেই সবাই বিক্রি করতেন।

ব্যবসায়ী কাদের খান জানান, বড় বড় ট্যানারি মালিকদের ব্যাংক থেকে সাপোর্ট দেওয়া হলেও জেলা শহরগুলোতে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সাপোর্ট দেওয়া হয় না। ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের গত বছরেরও প্রায় ২০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এখন সেই টাকাও দিচ্ছে না এবং এ বছরের চামড়াও নিচ্ছে না। এজন্য চামড়া ব্যবসায়ীরা মারাত্মক সমস্যায় রয়েছে। ট্যানারি মালিকদের খামখেয়ালিপনা ও ব্যাংক ঋণের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া লবণের দাম আগে যেখানে ৫০০ টাকা বস্তা ছিল তা এখন ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। চমড়ায় লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে গোডাউনে রাখা হয়েছে।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, ঝালকাঠিতে খুব বেশি চামড়া ব্যবসায়ী নেই। তাছাড়া যারা আছে এ পর্যন্ত তারা কোনো যোগাযোগ করেনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close