আকরামুল ইসলাম, সাতক্ষীরা ও মজিবার রহমান, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি

  ২৩ এপ্রিল, ২০১৯

বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে দুইটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকাল সোমবার ভোর রাতে উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলা এলাকায় প্রায় ১০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।

এদিকে খুলনা কয়রা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদের ঘাটখালী বেড়িবাঁধ ভেঙে লোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে এলাকা। এতে চলতি বোরো মৌসুমের পাকা ধান, মৎস্য ঘের ক্ষতির পাশাপাশি ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙনরোধে কাজ করে কোনো রকম পানি আটকানোর ব্যবস্থা করা হলেও জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলেও আতংক কাটছে না এলাকাবাসীর।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ভেসে গেছে শতাধিক মাছের ঘের। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি।

স্থানীয় প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, খোলপেটুয়া নদী বাঁধে বেশ কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই লাজুক। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালেও কোন কাজ হয় না। তারা এলাকায় আসেন না। কাজ হওয়া তো দূরের কথা। তিনি বলেন, সোমবার ভোরে একশ ফুট বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর স্থানীয় জনগণকে নিয়ে মেরামতের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। ঘটনাটি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

বাছধ সংস্কারের বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খান বলেন, প্রবল জোয়ারের পানির চাপে বাঁধটি ভেঙে গেছে। এটি সংস্কারের জন্য বোর্ডের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করছি, আগামীকালের মধ্যেই বাঁধটি সংস্কার করা সম্ভব হবে।

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, বেড়িবাঁধ ভাঙার ফলে শুধু ঘাটাখালী নয়, অব্যাহত ভাঙনের কারণে কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা, হরিনখোলা ও গোবরা পূর্বচক গ্রামের বাসিন্দারা রয়েছেন আতঙ্কে। ভাঙন রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা না

নেওয়া হলে নদীর তীরবর্তী জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ১৩-১৪/২-নং পোল্ডারের গোবরা, ঘাটাখালী ও হরিনখোলার বেড়িবাঁধ প্রায় ধসে যাওয়ার উপক্রম। গত রবিবার রাতের জোয়ারে ঘাটাখালী মসজিদ সংলগ্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে হঠাৎ লবণ পানিতে পুরো ঘাটাখালি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে পানি প্রবেশের হাত থেকে রেহাই পেলেও ভাঙ্গন আতংকে দিন কাটাচ্ছে এলাকবাসি। ইতিমধ্যে এলাকার অনেককে প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রসহ গবাদী পশু অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

ঘাটাখালী গ্রামের হানিফ, খাদিজা বেগম, আত্তাফ শেখ, হাফিজুর রহমান, মুদি দোকানি তৈয়েব আলীসহ একাধিক স্থানীয় প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে বেড়িবাঁধের গোড়ার মাটিতে ধসে যাওয়া বেড়েই চলেছে। রবিবার রাতে হাঠৎ মসজিদ সংলগ্ন বেড়িবাধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। ফলে চলতি বোরো মৌসুমের পাকা ধান ক্ষতির পাশপাশি মৎস্য ঘের তলিয়ে গিয়ে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ইতিপূর্বে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ, প্রতি বছর নদী ভাঙন শুরু হলেই ভাঙন রোধের নামে সরকারি অর্থ লুটপাটের তোড়জোড় শুরু হয়। যা শুধুই অপচয় মাত্র। তাদের দাবি, নদীভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আলহাজ্ব আ. গফ্ফার ঢালী বলেন, ভাঙ্গনরোধে স্থানীয় এলাকাবাসি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছে। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। কয়রা সদর ইউনয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোস্তফা নাজমুছ ছাদাত বলেন, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে কয়রা সদরের দরিদ্র মানুষ বসতবাড়ীসহ ফসলী জমি হারিয়ে আরো নিঃস্ব হয়ে পড়বে।

পাউবো আমাদী সেকশন কর্মকর্তা মশিউল আলম বলেন, ঘাটাখালী এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার খবর পেয়ে ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

জানতে চাইলে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিমুল কুমার সাহা ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণের সহযোগিতায় বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। এ ব্যাপারে পাউবোর উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে কার্যক্ররি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close