এম এ রউফ, সিলেট

  ১১ মে, ২০১৮

সিলেটের জাতীয় বাঁশ উদ্যান এখন বিরানভূমি

সিলেটে জাতীয় বাঁশ উদ্যানে নেই বাঁশের অস্তিত। শুধু সাইনবোর্ডে চোখে পড়ে ‘দেশের প্রথম জাতীয় বাঁশ উদ্যান’। বিলুপ্তপ্রায় বাঁশের প্রজাতি সংরক্ষণ ও সিলেটে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই গড়ে তোলা হয় জাতীয় বাঁশ উদ্যান। সঠিক কর্মপরিকল্পনা আর সমন্বয়হীনতার খেসারত দিচ্ছে এই উদ্যান। মাত্র সাড়ে ছয় বছরেই অস্তিত্ব হারিয়ে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবে সিলেট ফরেস্ট সায়েন্স টেকনোলজি বিভাগের পরিচালক সালেক প্রধান দেখাচ্ছেন তার সদ্য যোগ দেওয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘আমি সিলেটে নতুন যোগ দিয়েছি। প্রকল্পটি আমার যোগ দেওয়ার আগেই অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে।’

২০১৩ সালের ৬ জুন ২৩ প্রজাতির প্রায় ৭০০ বাঁশের চারা রোপণের মাধ্যমে দেশের প্রথম জাতীয় বাঁশ উদ্যানের যাত্রা শুরু হয়। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কের পাশে পর্যটন মোটেলের বিপরীতে ৩০ একর জায়গায় অবস্থিত বন বিভাগের ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত দুটি টিলা ও সমতল ভূমির ১ দশমিক ৪১৭ হেক্টর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয় বাঁশ উদ্যান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রবেশপথের প্রধান ফটকে জাতীয় বাঁশ উদ্যানের নাম সংবলিত সাইনবোর্ডে বাঁশের জাত, নাম ও উদ্যানের তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সাড়ে চার বছর না যেতেই এখন উদ্যানে বাঁশের অস্তিত্বই নেই। উদ্যান এলাকায় মরে যাওয়া বাঁশের গোড়া আর ঘাসের রাজত্ব। উদ্যানে প্রবেশকালে চোখে পড়ে সাইনবোর্ড। সেখানে ২৩ প্রজাতি বাঁশের নাম লেখা রয়েছে। প্রজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ কলসি, পেঁচা, রুপাহি, টেংগা, জাই, মুলি, থাই বরুয়া, কাঁ-বরুয়া, পলি মরকা, কঞ্চি, বুদুম, কালী, সোনালি, ডলু, মাকাল, মৃতিঙ্গা, তেতুয়া, ওড়া, বেতুয়া, পরুয়া, বরুয়া, বোতম, রঙ্গন ও পারুয়া বাঁশ।

সরেজমিন দেখা গেছে, ২৩ প্রজাতির ৭০০ বাঁশ থাকার কথা থাকলেও ১৫-২০টি বাঁশের চারা উদ্যানের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। পুরো উদ্যান জুড়েই অযতেœর ছাপ। উদ্যানে নানা ধরনের গাছপালা রয়েছে, কিন্তু পরিচর্যা নেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উদ্যানটি।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি প্রবণ অঞ্চল হওয়ায় পরিবেশগত কারণে বাংলাদেশের মধ্যে সিলেটে এক সময় বাঁশের উৎপাদন বেশি হতো। পরিবেশগত কারণে সিলেট বাঁশ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সিলেটে যত প্রজাতির বাঁশ রয়েছে, তা দেশের অন্য কোথাও নেই। বাঁশের উৎপাদন বাড়ানো, বিলুপ্তপ্রায় বাঁশের প্রজাতি সংরক্ষণ ও সিলেটে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই গড়ে তোলা হয় জাতীয় বাঁশ উদ্যান। এ ছাড়া উদ্যানটি একসময় উদ্ভিদ ও জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের গবেষণাকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেছিলের বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে সে আশায় গুড়েবালি। অযতœ অবহেলায় বড় হওয়ার বদলে মরে গেছে সব বাঁশ।

বেসরকারি সংস্থা সেভ দি হ্যারিটেজের সমন্বয়কারী আবদুল হাই আল হাদী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘শুধু সিলেট নয়, দেশের জন্য বাঁশ উদ্যানটি বড় একটি উদাহরণ হতে পারত। তবে বন বিভাগের উদাসীনতার কারণে উদ্যানটির আজ করুণ দশা। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বাঁশ ভালো হয়। নির্দিষ্ট সময়ে চারা রোপণ না করলে সেটি টিকিয়ে রাখা দুষ্কর। তাছাড়া সব ধরনের বাঁশ সব জায়গায় হয় না। বাঁশ লাগানোর সময় মাটি পরীক্ষা করার প্রয়োজন থাকলেও এ ক্ষেত্রে উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে বন বিভাগ।’

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আর এস এম মুনিরুল ইসলাম জানান, এ প্রকল্প নিয়ে সরকার লাভবান হতে পারেনি। নানা কারণে এটা হয়েছে। তবে বিষয়টি দেখভাল করে ফরেস্ট সায়েন্স টেকনোলজি বিভাগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সয়েল টেস্ট না করেই এখানে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ লাগানো হয়েছিল। ফলে এখানকার মাটির সঙ্গে ম্যাচ না করতে পেরে টিকে থাকতে পারেনি বাঁশগুলো। তবে আমরা এ প্রকল্পটি মৌলভীবাজারে বাঁশবান্ধব কোনো এলাকায় পুনরায় চালু করার চেষ্টা করব। আর বর্তমান উদ্যানটিতে আমরা বনজ, ঔষধীসহ দেশের সব প্রজাতির গাছের একটি ‘আরবোরেটাম’ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ‘সাসটেইনেবল ফরেস্ট আ্যন্ড লাইভলিহুড (সুফল)’ নামে এ প্রজেক্টটি আগামী বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের দিকে প্রায় ৩৭ একর জায়গা নিয়ে করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist