আল মামুন জীবন, বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও)

  ০৬ মার্চ, ২০১৮

ঠাকুরগাঁওয়ে বাড়ছে সোলার বিদ্যুতে বোরো চাষ

সোলায়মান আলীর কাছ থেকে ১৯টি সোলার প্যানেলের সেচপাম্প ক্রয় করেছেন জেলার কৃষকরা

এক সময় লোডশেডিংয়ের কারণে ধান উৎপাদন ব্যহত হলেও সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এখন সেই দুঃচিন্তা কিছুটা দূর করেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, সেচ ব্যবস্থা সুবিধাজন হওয়ায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পুরণে সব সময় এগিয়ে উত্তরের এ জেলা।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী ও সদরসহ ৫ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৬০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে বোরা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখান থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। গত এই আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে। যেখান থেকে ২ লাখ ৪১ হাজার ২১০ মেঃ টন চাল উৎপাদন হয়েছিল।

এদিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানায়, উপজেলায় প্রায় ৫৬০০টি ডিজেল চালিত স্যালোমেশিন, ১৮০টি বিদ্যুত চালিত গভীর নলকূপ এবং ৩টি সৌরবিদ্যুত চালিত পাম্প দিয়ে এ বছর বোরো চাষ হচ্ছে। যার মধ্যে উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের কালমেঘ গ্রামে ২টি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নেওয়া এবং বড়বাড়ী ইউনিয়নের উত্তর বালিয়াডাঙ্গী গ্রামে ১টি সরকারিভাবে দেওয়া।

জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারিয়া ইউনিয়নের চাষিরা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ দিয়ে মাঠের পর মাঠ বোরো আবাদের জন্য জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেল সেচ সুবিধায় গুরুত্ব রাখায় জেলার বেশিরভাগ কৃষক এখন এ সুবিধা গ্রহন করছেন।

সদর উপজেলার ভেলাজান ইউনিয়নের মোলানী গ্রামের সোলায়মান আলী কৃষকের সেচ ব্যবস্থায় ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলের প্রথম উদ্ভাবক হিবেসে পরিচিত হয়ে উঠেছে। গত ৩ বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে সোলারের মাধ্যমে মটর দিয়ে তৈরি করা সেচ ব্যবস্থায় নিজ জমিতে সেচ চালু করে। পরে স্থানীয় কৃষকরা তা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার কাছ থেকে ভ্রাম্যমান সেচ ব্যবস্থা ক্রয় করে। এরপর জেলার কৃষকদের মাঝে তা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠে। শুধু সোলায়মান আলীর কাছ থেকে ১৯টি সোলার প্যানেলের সেচ পাম্প ক্রয় করেছেন জেলার কৃষকরা।

একসময় জেলার কৃষকরা শ্যালো মেশিন নির্ভর সেচ ব্যবস্থায় অভ্যস্ত ছিল। অন্যদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় সেচ সুবিধা থাকলেও সময়মত সেচ সুবিধা পেকে হয়রানির শিকার হতো। আর বিদ্যুত দিয়ে সেচ সুবিধা নিতে হলেও খরা মৌসুমে শুরু হয় ঘন ঘন লোডশেডিং। সবকিছু বিশ্লেষণ করে কৃষকরা মনে করছেন সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা সবচেয়ে সুবিধাজনক। তাই সোলার প্যানেলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের মজিবর রহমান, আইয়ুব আলী, মোকলেসুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষক জানান, আগে বোরো মৌসুমে সেচ নিয়ে কৃষককে বিপাকে পরতে হতো। খরায় মাটি ফেটে ধান উৎপাদনে লোকসান গুনতে হতো। এখন ভ্রাম্যমান সোলারের সেচ ব্যবস্থায় অনেক সুবিধা পাচ্ছে কৃষক। এ কারনে কৃষক বেশ লাভবান হচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ্য করেন, এ সুবিধা না থাকলে কম করে হলেও একটি শ্যালো ১৫-২০ হাজার টাকায় ক্রয় করে সেচ দিতে হতো। এতে তেল ক্রয় মেশিন আনা, নেয়া, চুরি ও নস্ট হওয়ারও ভয় থাকতো। এখন তা লাগছে না।

বর্তমানে চুক্তি অনুযায়ী ৫০ শতকের এক বিঘা জমিতে ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেল দিয়ে ধান উৎপাদন পর্যন্ত টাকা খরচ হচ্ছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। আর শ্যালো দিয়ে সেচ দিতে হলে খরচ হচ্ছে ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর ভোগান্তিতো রয়েছেই। তাই সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ নিচ্ছেন জেলার কৃষকরা।

মোলানী গ্রামের ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলের সেচ ব্যবস্থার উদ্যোগতা সোলায়মান আলী জানান, আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৩ বছর আগে সেচ ব্যবস্থাটি চালু করি। এতে আমাকে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। ১টি ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলের সেচ ব্যবস্থায় তৈরিতে খরচ হয় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর সময় লাগে মাত্র ৩ দিন। এখন পর্যন্ত আমি জেলার কৃষকের কাছে ১৯টি ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলের সেচ ব্যবস্থা বিক্রি করেছি। যা ১০-১৫ হাজার টাকা বেশিতে বিক্রি করা হয়েছে। এ সেচ ব্যবস্থায় কৃষক ভরসা পাচ্ছে বলেই তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বিদ্যুতের ঘাটতিও কমছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist