কুমিল্লা প্রতিনিধি

  ২৫ মে, ২০২২

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ

সড়কদ্বীপ যেন বর্ণিল ফুলের বাগান

গ্রীষ্মের দাবদাহে যাত্রা যখন ক্লান্তি সৃষ্টি করে তখনই স্বস্তির সুবাতাস ছড়ায় মহাসড়কের সড়ক বিভাজের পুষ্পিত হলুদ সোনালু, বেগুনি রঙ্গা জারুল, লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে সবুজ পাতার ফাঁকে দিয়ে উঁকি দেওয়া এসব বাহারি ফুল শুধু দৃষ্টিকে প্রশান্তি দেয় না, মনকেও ভরিয়ে তোলে মুগ্ধতায়। ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে সড়ক বিভাজকে পুষ্পিত নানা রং ও জাতের সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, জারুল, টগর, বাড়াচ্ছে যাত্রাপথের শোভা। রঙিন এসব বাহারি ফুল মহাসড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

দেশের প্রধান জাতীয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের মাইলের পর মাইলজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতীর ফুলে ছেঁয়ে গেছে। লাল, হলুদ, গোলাপি, বেগুনিসহ বিভিন্ন রঙের ফুলের সৌন্দর্যে বদলে গেছে মহাসড়কের চিত্র। প্রতিদিন মহাসড়কে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা উপভোগ করছেন।

সরেজমিন ঘুরে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, দেশের প্রধান জাতীয় মহাসড়কটি ফোর লেনে উন্নীত হওয়ার পর কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা হয়ে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন অংশে সড়ক দ্বীপে সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ। এ লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ৩০ জুন মহাসড়কের ফোর লেনের মাঝে সড়ক দ্বীপে বৃক্ষ রোপণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে সৌন্দর্য বর্ধনে ১২ প্রজাতির ফুলগাছ রোপণ করা হয়। কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, মহাসড়কের ফোর লেনের কাজ শেষে সড়ক দ্বীপে সৌন্দর্য বর্ধনে ফুলগাছ লাগাতে দায়িত্ব পায় সাগর বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এরপর ২০১৬ সালের ৩০ জুন কার্যাদেশ পায় প্রতিষ্ঠানটি। ফুলের চারা রোপণ করার পর আস্তে আস্তে গাছগুলো বড় হয়ে ফুল ফুটতে শুরু করলে বদলে যায় মহাসড়কের চিত্র। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে আরো জানা যায়, সৌন্দর্য বর্ধনে সড়ক দ্বীপে সবুজ গাছের মাঝে যেসব ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে কুরচী, বকুল, সোনালু, রাধাচূড়া, কেছিয়া, কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চণ, করবী, জারুল, টগর, পলাশ, হৈমন্তী। বর্তমানে গাছগুলো বড় হয়ে যাওয়ায় প্রতিটি গাছেই ফুলের সমারোহ। প্রতিদিন যাতায়াতকারী হাজার হাজার যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা এই সৌন্দর্যে মোহিত হচ্ছেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বিভিন্ন অংশে চোখে পড়ে লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়ার রাজত্ব। কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে/আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’। পাঁচ পাপড়ির এই ফুলটি নিজের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে এই পথে ভ্রমণকারী প্রকৃতিপ্রেমীদের বিমোহিত করে আপন মাধুর্যে। রূপমাধুর্যে পিছিয়ে নেই হলুদ সোনালুও। সড়কজুড়ে এখন এই ফুলের সমারোহ। যা চোখে প্রশান্তি এনে দেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের। বেগুনি রঙা জারুলের রঙের ছটা মনকে দোলা দেয়। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য অনায়াসে দৃষ্টি কাড়ে পথচারীদের। মহাসড়কের এই অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে পুষ্পিত এসব ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ এ পথে চলাচলকারী যাত্রীরাও। যাত্রীরা জানান, এসব ফুলের সৌন্দর্যে যেমন যাত্রা পথের ক্লান্তি দূর হচ্ছে পাশাপাশি রক্ষা হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। ঢাকা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন চালক ফোরকান মিয়া। কুমিল্লার কোরপাই অংশে সড়কের পাশে ট্রাক থামিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, যাত্রাপথে দীর্ঘসময়ে ট্রাক চালানোর কারণে ক্লান্তি চলে আসে। তখন আইল্যান্ডের এই ফুল গাছগুলোর নিচে একটু বিশ্রাম নেই। এই গাছগুলো দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়।

এই পথে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে প্রাইভেট গাড়ি করে চট্টগ্রাম আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিলেন গোলাম কিবরিয়া। সড়ক দ্বীপে ফুলের এমন সৌন্দর্য দেখে স্ত্রী-সন্তানদের অনোরুধে ক্লান্তি দূর করতে দাঁড়ালেন কুমিল্লার জাগুড়ঝুলি এলাকায়। তিন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে সড়ক বিভাজকে ফুল ফুটছে। এই ফুল গাছগুলো সড়কের রূপ যেমন বাড়িয়েছে তেমনি পরিবেশের শোভা বাড়াতে এর ভালো প্রভাব পড়ছে। আমি এবং আমার পরিবার এসব ফুলের সৌন্দর্য দেখতে একটু দাঁড়িয়ে প্রশান্তি নিলাম। সড়ক দ্বীপ যেন ফুলের বাগান।

তবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব সড়কদ্বীপে ঝোপঝাড় সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ঝোপঝাড়ের কাছে মøান হচ্ছে ফুলের সৌন্দর্য। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তাঝুঁকি। এ নিয়ে কালাকচুয়া বাজার এলাকার দোকানদার খোকন মিয়া বলেন, ফুল গাছগুলোর কারণে রাস্তাটা খুব সুন্দর লাগে। তবে নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সড়ক বিভাজকে ঝোপঝাড়, জঙ্গল হয়ে গেছে। এগুলো পরিষ্কার করলে রাস্তাটা আরো সুন্দর লাগবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০০ কিলোমিটার জুড়ে নানা জাতের ফুল গাছ রয়েছে। এসব ফুল গাছ সড়কের শোভা বাড়াচ্ছে, পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও কাজ করছে। বেশ কয়েক জায়গায় ফুল গাছ মিসিং হয়েছে আমরা এসব পুনরায় রোপণ করব। ঝোপঝাড় পরিষ্কারে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close