বিশেষ প্রতিবেদক, রাজশাহী ব্যুরো

  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

করোনায় বেড়েছে বেকারত্ব

রাজশাহীতে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির আশঙ্কা

করোনাকালে রাজশাহী নগরীর শতকরা ৯০ শতাংশ চা বিক্রেতার আয় কমেছে। আর বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ চা-স্টল। আর এভাবে চললে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে সচেতন মহল। সম্প্রতি রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় পরিচালিত এক জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তবে চা বিক্রেতারা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছেন।

বেসরকারি সংস্থা রুরাল অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (রুডো) ও লেডিস অরগানাইজেশন ফর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার (লফস) আমরাই পারি প্রকল্পের আওতায় ২৫০টি চা স্টলের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করে। রুডো ও লফসের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা সরাসরি ২৫০টি চা স্টল জরিপ করেন এবং প্রায় ৫০০ চা স্টলের মালিক-কর্মচারীর সঙ্গে মৌখিকভাবে আলাপের মাধ্যমে তথ্য গ্রহণ করেন। জরিপ পরিচালনা করেন রুরাল অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (রুডো) তামান্না ইসলাম ও লফসের টুম্পা পাল। জরিপ শেষে তারা বলছেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ২০০০-এর মতো ছোট-বড় ও ভ্রাম্যমাণ চা স্টল রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে করোনার প্রভাবে মহানগরীর প্রায় ৪০ শতাংশ চা স্টল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আস্তে আস্তে এগুলো চালু হচ্ছে। বর্তমানে যারা ব্যবসা করছেন তারা প্রত্যেকেই ব্যবসা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। করোনাকালে প্রায় সবার একমত, তাদের ব্যবসা অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে।

মহানগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ের চা বিক্রেতা আমিরুল ইসলাম গতকাল সোমবার সকালে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমি করোনার আগে ভোর ৬টায় দোকান খুলতাম, এখন লোকজন নেই, তাই দেরি করে খুলি। করোনার প্রথম কদিন একেবারে বন্ধ থাকলেও সংসারের প্রয়োজনে দোকান খুলতে বাধ্য হয়েছি।

নগরীর ডিঙ্গাডেবা এলাকার সুমন বলেন, করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ, সন্ধ্যার পর লোকজন একেবারে কম, তাই রোজগার খুব খারাপ। খুব কষ্টে আছি ভাই। পারলে আমাদের জন্য কিছু করেন।

রেলগেট বিন্দুর মোড় এলাকার রমজান আলী বলেন, বাজারে লোকসমাগম বাড়লেও মানুষের মনে একটা আতঙ্ক কাজ করছে, তাই আগের মতো ব্যবসা নেই। আগে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হতো, যা এখন ২০০-৩০০ টাকা আয় করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সাহেব বাজারের আলোচিত চায়ের দোকান সঞ্জয় কুমার বলেন, আমার প্রত্যেক দিনের আয় প্রায় ১৫০০ থেকে ২ হাজার হাজার টাকা কিন্তু বর্তমানে হিসাব মেলাতে পারছি না। এমনি পরিস্থিতি আসলে প্রায় সবার। ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা করিম বলেন, আমি আগে প্রত্যেক দিন ২০০-২৫০ টাকা আয় করতাম, এখন ৫০-১০০ টাকাও কোনো কোনো দিন হচ্ছে না। জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা রুডোর পরিচালক মো. সোহাগ আলী বলেন, এই জপির পরিচালনা করতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অর্জন হলো। শিক্ষানগরী হওয়ায় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বর্তমানে চা বিক্রেতাসহ সব ব্যবসায় একটা ধস নেমেছে। শতকরা ৪০ শতাংশ চা স্টল বন্ধ হওয়া একটা আশঙ্কার ব্যাপার। এভাবে চললে বেকার সংখ্যা বাড়বে আর এর ফলে অপরাধ বাড়তে থাকবে।

লফসের নির্বাহী পরিচালক শাহানাজ পারভীন বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি আজ জনজীবনকে আতঙ্কিত ও দুর্বিষহ করে ফেলেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা পরিচালনা করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সরকার নানা রকম সুবিধা প্রণয়নের মাধ্যমে এই সংকট থেকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় যা অপ্রতুল। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার চা বিক্রেতারা নিঃসন্দেহে নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের পরিবারের জীবন-জীবিকা এই ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। তাই সরকারিভাবে তাদের জন্য কোনো সুযোগ তৈরি করা যায় কি না, তা ভাবা প্রয়োজন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close