নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে

প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অডিটোরিয়ামে কমিটি আয়োজিত ‘জাতীয় কনভেনশন ২০১৯’ থেকে বক্তারা এ আহ্বান এ জানান। জাতীয় কনভেনশনের সকালের সেশনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। ‘সুন্দরবন ও উপকূলবিনাশী কয়লা এবং দেশবিনাশী পারমাণবিক প্রকল্প বাতিল করো’ শীর্ষক এই কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন প্রকৌশলী শেখ মো. শহীদুল্লাহ। অন্যদের মধ্যে সকালের সেশনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহম্মদ, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

শেখ শহীদুল্লাহ্ বলেন, আমাদের জাতীয় সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সুলভ, জনবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় দাবি অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করছি। দেশের স্বার্থরক্ষায় এই আন্দোলন আরো বেগবান করতে হবে। পুঁজিবাদ জনগণের এই স্বার্থকে গ্রাস করতে চাইছে। সবাই মিলে পুঁজিবাদের এই আগ্রাসী ভূমিকা রুখে দিতে হবে।

ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের পরিবেশ ধ্বংসের বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের সবাইকে মিলে সেই ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। সুন্দরবন আর আমাজন একইসূত্রে গাথা। আমাজন আগুনে জ্বলছে আর সুন্দরবন ধ্বংসের চেষ্টা চলছে। উন্নয়নের নামে দেশে যে বিনিয়োগ হচ্ছে, তা পুঁজিবাদী বিনিয়োগ। পুঁজিবাদী বিনিয়োগই সব দুর্গতির জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে, যা পৃথিবীর জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমাতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। প্রকৃতিকে উত্ত্যক্ত করার কারণে প্রকৃতিও এখন প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠেছে। তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘তিন ভাগ গ্রাসে আছ, এক ভাগ বাকি। সেই একভাগও সমুদ্র গ্রাস করতে চাইছে।’

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, এই অনিয়ম রুখতে হলে পুঁজিবাদকে বিদায় করে সামাজিক বিপ্লব ঘটাতে হবে।

সুলতানা কামাল বলেন, দেশের প্রকৃতি ও প্রাণ বিপর্যয়ের মধ্যে চলে গেছে। আমরা মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশ স্বাধীন করেছি, তা শুধু ভূখন্ড অর্জনের জন্য ছিল না। আমাদের কিছু নৈতিক লক্ষ্য ছিল। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। আমাদের সরকার এখন নারীবান্ধব ও জনবান্ধবের চেয়ে ব্যবসাবান্ধব হয়েছে। তারা সবকিছু করছে ব্যবসার জন্য। সুন্দরবনকে আমাদের জাতীয়ভাবে বাঁচাতে হবে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, যদি জনগণের গুরুত্ব থাকত তাহলে উপকূলে বিদ্যুৎকেন্দ্র করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাধা তৈরি করা হতো না। উপকূলজুড়ে প্রায় ২২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে জলবায়ু মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে। জলবায়ু উদ্বাস্তুর পাশাপাশি আমাদের উন্নয়ন উদ্বাস্তুও তৈরি হবে। এ তো গেল উপকূলের কথা। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলে চলছে আরেক কা-। এশিয়া এনার্জি ফুলবাড়িয়ায় কয়লা তুলতে চাইছে। চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করছে। তারা নানা রকম প্রপান্ডা করছে। কিন্তু সরকার বাধা দিচ্ছে। তাদের এসব কাজ বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘ফুলবাড়িয়া ছাড়াও উত্তরাঞ্চলে হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই কেন্দ্রের জন্য কোনো রকম জনসম্মতি নেওয়া হয়নি। নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এমনকি কেউ যেন প্রতিবাদ করতে না পারে, সেজন্য ভয় দেখানো হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানা কথা বুঝানো হচ্ছে। এই অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

আনু মুহম্মদ বলেন, পিএসসি ২০১৯ এর নামে দেশের সাগরের গ্যাস বিদেশিদের কাছে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই চেষ্টা আমাদের রুখতে হবে। এদিকে এসব কাজ থেকে সরকারকে বাঁচাতে দায়মুক্তি আইন করা হয়েছে। এই আইন বাতিল করতে হবে।

তিনি বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা বিকল্প মহাপরিকল্পনা করেছি। সে পরিকল্পনায় দেশের ক্ষতি না করে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। পরিকল্পনা সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই বিষয়ে তারা কোনো কাজ করছে না। আসলে মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ নয়, বিদেশিদের ব্যবসা দেওয়াই সরকারের মূল উদ্দেশ্য। আমাদের মহাপরিকল্পনায় কম দামে সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব।

তাই সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই হবে।

কনভেনশন থেকে সরকারের উদ্দেশে যে পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে এক. রামপালসহ সুন্দরবনবিনাশী সব প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। উপকূলজুড়ে কয়লা বিদ্যুতের বদলে সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের বৃহৎ প্রকল্প তৈরি করে বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ কমাতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close