খুলনা (মহানগর) প্রতিনিধি

  ২১ অক্টোবর, ২০১৯

খুলনা সিটির ৩১নং ওয়ার্ড

কাউন্সিলর অফিস যেন শিশুপার্ক

আমি প্রতিদিনই এখানে আসি। খেলতে আসি। এখানে আসতে আমার অনেক ভালো লাগে। এখানে এসে আমরা ঘোড়ায় চড়ি, ছক্কা খেলি, হরিণ খেলি, আরো কত কিছু খেলি। কথাগুলো গুছিয়ে বলছিল ছোট্ট শিশু মোহাম্মাদ আলী। তার মতো অন্য শিশুরাও খেলছিল খুলনা নগরীর ৩১নং ওয়ার্ড অফিসে।

ওয়ার্ড কার্যালয়ে নাগরিক সেবা নিতে আসা নারীদের সঙ্গে আসে অনেক শিশু। এসে তারা অভিভাবকদের অস্থির করে তোলে; কান্নাকাটি করে। সেই ভাবনা থেকে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে তৈরি করা হয়েছে শিশু কর্নার। রয়েছে আধুনিক খেলার সরঞ্জামাদি। ওয়ার্ড অফিসে সেবা নিতে আসা নারী অভিভাবকরা যতক্ষণ অবস্থান করেন, ততক্ষণ তাদের শিশুরা সেখানে মনের আনন্দে খেলতে থাকে।

গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর ৩১নং ওয়ার্ড অফিসে মনের আনন্দে খেলছিল শিশু হাবিবা, বৃষ্টি, তামিম, আসিফ, মাশরাফি, মহির, রাকিব, খুশি, রিফাত, মুছা, মারিয়া, মো. নাঈমসহ আরো অনেকে। এর কিছুক্ষণ বাদে সেখানে এসে উপস্থিত হন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরিফ হোসেন মিঠু। তিনি আসতেই সব ছেলেমেয়েরা খেলা ছেড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে যায়। কাউন্সিলর অফিস রুমের ভেতর থেকে একটি বোয়াম নিয়ে আসে। প্রত্যেক শিশুকে সেখান থেকে চকলেট দেন তিনি। সবাই আবার খেলায় মনোযোগ দেয়।

ওয়ার্ড অফিসের শিশু কর্নার সবার জন্য উন্মুক্ত। কার্যালয় খোলা থাকলে যেকোনো শিশু, যেকোনো সময়ে এসে খেলতে পারে। খেলতে আসা শিশুরা নতুন নতুন বন্ধু পায়, দেখা পায় পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে। যেন শিশুদের ছোট্ট স্বর্গরাজ্য। প্রতিদিনই শিশুর পদচারণায় মুখর থাকে কর্নারটি।

ওয়ার্ড অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসে পাশের চেয়ারে বসে ছিলেন শিশু মাশরাফির মা পারভিন খান। তিনি জানান, ‘এক দিন ছেলেকে কোলে নিয়ে নাগরিক সনদ নিতে কাউন্সিলর অফিসে আসি। এখানে এসে অনেক খেলনা দেখে, আমার ছেলে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে শুরু করে। সেই থেকে প্রায় প্রতিদিনই সকাল হলে এখানে আসার জন্য কান্নাকাটি করে সে। এ কারণে প্রায়দিনই ছেলেকে এখানে নিয়ে আসি। খেলা করে, আবার চকলেটও পায়। ও খুব মজা পায়।

সাহিদা আক্তার নামে আরেকজন শিশুর মা জানান, এখানে এলে শিশুরা খুব হাসিখুশি থাকে। নতুন বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে। দেখেও ভালো লাগে। প্রত্যেক শিশুর বাড়িতে এমন খেলনা নেই। তা ছাড়া এখানে এলে অনেক শিশু এক জায়গায়ও হতে পারে। খেলতে পারে। এটি মিনি পার্কের মতো।

৩১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরিফ হোসেন মিঠু জানান, নির্বাচনের সময় আমি যখন ভোট চেয়েছি এলাকায়। তখন কাছে চকলেট রাখতাম। ছোটদের দিতাম। তারা খুশি হতো। জয়ী হওয়ার পর, অনেক শিশুই অভিভাবকের সঙ্গে অফিসে এসে আমার কাছে চকলেট চায়। শিশুরা ঠিকই মনে রেখেছে। অনেক শিশুই এসে কান্নাকাটি করে। অস্থির করে তোলে। বিষয়টি আমার মাথায় ছিল।

তিনি বলেন, ‘আমার নিজের সন্তানের জন্য খেলনা কিনতে গিয়ে মনে পড়ে তাদের কথা। দেখলাম অল্প খরচ। তাই এসব শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের জন্য আরো কয়েকটি খেলনাও কিনলাম। অফিসে জায়গাও ঠিক করে দিলাম। তারা এখানে এসে খুব মজা করে।’ ‘শিশুদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি। ৪৫ দিন বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্ম নিবন্ধন ফ্রি করেছে সরকার। আর এ ওয়ার্ডের ১০ বছর পর্যন্ত বয়সি শিশুদের জন্ম নিবন্ধন ফি আমি দিয়ে দেই। শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যসেবারও ক্যাম্প করেছি। খুলনা সিটি করপোরেশনের সব থেকে বড় ওয়ার্ড এটি।’

তিনি আরো জানান, ‘মিল, কল-কারখানা থাকায় অনেক শ্রমিকের বাস এখানে। এ ছাড়া উপকূলীয় উদ্বাস্তু এবং অনেক দরিদ্র মানুষ থাকেন এ ওয়ার্ডে। এদের শিশুদের কথা স্মরণ করেই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি সেবার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও যদি এগিয়ে এসে এইসব শিশুদের জন্য কিছু করত তাহলে ভালোই হতো। শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সেইসব শিশুদের জন্য আমাদের সকলেরই কিছু না কিছু করা দরকার।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close