আব্দুর রহমান রাসেল, রংপুর

  ২০ এপ্রিল, ২০১৮

রংপুর বিআরটিসিতে হ য ব র ল

জায়গা নেই বলে রাস্তায় নষ্ট ২৫ বাস!

অযতœ আর অবহেলায় নষ্ট হয়ে গেছে রংপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ২৫টি বাস। শুধু জায়গার সংকট দেখিয়ে বাসগুলো অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। কখনোই এগুলো মেরামতেরও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে কয়েকটিতে মরীচিকা ধরেছে। কয়েকটির কাঠামো ছাড়া আর কিছুই নেই। নেই যন্ত্রাংশও। এতে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা গচ্ছা গেছে। সরেজমিন পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরের আরকে রোডের বিআরটিসির ভাড়া ডিপো সংলগ্ন রাস্তায় ২৫টি বাস সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বাসগুলোতে মরীচিকা ধরেছে। বেশ কটি বাসের কাঠামো ছাড়া যন্ত্রাংশ অবশিষ্ট নেই। স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫-৭ বছর থেকে এভাবেই পড়ে আছে বাসগুলো। বিভিন্ন সময় বাসগুলোর মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে। রাত ৯টার দিকে বিআরটিসি কাউন্টার বন্ধ হওয়ার পর বাসগুলো দেখার আর কেউ থাকে না। এতে, সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় এগুলোর যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে অনেকেই। এক্ষেত্রে বিআরটিসির কর্মচারীদেরও হাত রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বাসের যন্ত্রাংশ চুরি যাওয়ায় বাসগুলো এখন একেবারেই অকেজো বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিসির এক কর্মচারী।

তিনি জানান, বিআরটিসিতে চাকরি পাওয়ার পর থেকেই তিনি ওই বাসগুলোকে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখছেন। বিগত সময়ে এগুলো মেরামত বা স্থানান্তরে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তার দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর না থাকায় বাসগুলো মেরামত করা হয়নি। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পদ। এতে লোকসান গুনতে হবে বিআরটিসিকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি বিআরটিসির রংপুর ডিপোতে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী জানান, উদ্যোগ নিলেই বাসগুলো মেরামত করা সম্ভব হত। কিন্তু তা না করে শুধু জায়গা সংকুলান হচ্ছে না এমন অজুহাতে বাসগুলো অরক্ষিত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে। এতে বিআরটিসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেট ভারী হয়েছে বলে জানান তিনি। রাস্তার পাশাপাশি বিআরটিসির রংপুর ডিপোতেও বেশ কয়েকটি বাস অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অধিকাংশ বাসের বিভিন্ন অংশ খুলে রাখা হয়েছে ডিপো চত্বরে।

এদিকে, হাইওয়ের দুই পাশে প্রায় স্থায়ীভাবে বিআরটিসির বাস ফেলে রাখায় রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এতে ওই স্থানে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পথচারীরা-চালকরা।

ইজিবাইক চালক রাশেদ জানান, আরকে রোডটি একটি ব্যস্তময় সড়ক। এই সড়কে বড় যানবাহনগুলো বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। বিআরটিসি স্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী সড়কে বড় পরিবহনগুলোকে জায়গা দিতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। বাসগুলো রাস্তার ওপর রাখায় ওই স্থানে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পায় না ছোট পরিবহনগুলো। এভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রাখার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অনেকেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, বিআরটিসি একটি লুটপাটের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখানে জবাবদিহিতার কোনো জায়গা নেই। যে যেভাবে পারছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করছে। বাসগুলো এভাবে ফেলে রেখে শুধু রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে না, এর মাধ্যমে জনগণের ভোগান্তিও বাড়ানো হয়েছে। অতিদ্রুত বাসগুলো মেরামত করা না হলে কয়েকদিন পর সেগুলো সমূলেই চুরি হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

বিভাগীয় লেখক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকির আহমদ জানান, বাংলাদেশে চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবহন সংকট পরিলক্ষিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে সামান্য অজুহাতে এতগুলো বাস অকেজো করে ফেলে রাখার কোনো অর্থ হয় না। জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে বাসগুলো মেরামত করে গণমানুষের সেবা বৃদ্ধি করা দরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি বিআরটিসি রংপুর ডিপোর ম্যানেজার জামশেদ আলী। তিনি এ বিষয়ে মূল কার্যালয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে জানতে বিআরটিসির ঢাকা কার্যালয়ের পরিচালক হামিদুর রহমানের (যুগ্ম সচিব) টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist