এম এ রউফ, সিলেট

  ০২ মার্চ, ২০১৮

সিলেটে সড়কের কাজে অনিয়ম!

ধীরগতিতে যানচলাচল দুর্ভোগের শেষ নেই

সিলেট শহরতলীর গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক সদর উপজেলার সাহেবের বাজার-ধোপাগুল ও ফতেপুর। এ সড়কের মধ্যে ধোপাগুল-সীমারবাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর ধরে ধীরগতিতে চলছে সংস্কার কাজ। অপরিকল্পিতভাবে এ কাজ করায় এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জমে যায় পানি। অভিযোগ ওঠেছে, সড়কের কাজে অনিয়ম হচ্ছে।

জানা গেছে, ধোপাগুল থেকে সীমারবাজার সদর অংশ পর্যন্ত সড়কটি ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ শুরু হয় প্রায় দেড় বছর আগে। ৭ কিলোমিটার সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৪ কিলোমিটার সড়কের। অভিযোগ ওঠেছে, সড়কে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সংস্কার হওয়া অংশ এরই মধ্যে ভাঙতে শুরু হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কের একপাশের কাজ শেষ হতে না হতে অন্যপাশের মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। ফলে যানবাহন যাতায়াত করছে ঝুঁকি নিয়ে। তাছাড়া পর্যটন কেন্দ্র রাতারগুলে যেতে এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। সড়কটির সংস্কার কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় এবং সংস্কার কাজে অনিয়ম হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ। কেউবা আবার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খাদিমনগর ইউপি সদস্য বশির আহমদ গত শনিবার লিখেছেনÑ ‘আমরা সাহেবেরবাজার তথা পূর্ব খাদিমনগর ইউনিয়নবাসী দুর্ভোগের শেষ কোথায়, অল্পবৃষ্টিতে পানি জমে কাদা হয়েছে। বৃষ্টি মৌসুমের আগে মেরামত না করলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাবে ধোপাগুল শহীদ মিনার থেকে মহালদিকের ব্রিজের সামন পর্যন্ত। বিভিন্ন সাইটে পাথর রেখে ও লোড গাড়ি যত্রতত্র রেখে যানজট সৃষ্টি করছে।’

সদর উপজেলা বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার সভাপতি ও খাদিমনগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আনছার আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কানো তোয়াক্কা না করে শুরু থেকে এ সড়কের কাজে নিম্নমানের মালামাল দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মাঝে সংস্কার করার দুই সপ্তাহের মধ্যে আলাই বহর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পুনরায় গর্ত হয়ে গেছে। সরকার টাকা দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু সে অনুযায়ী কোনো কাজ হচ্ছে না।’ সড়কে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে স্বীকার করে খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দিলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি দফায় দফায় উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই নিম্নমানের কাজের কথা বলেছি। কিন্তু বাস্তবে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাতে আমিও হতাশ হয়েছি। শহীদ মিনারের সামনে মনে হয় একটি নদী! সেখানে প্রতিদিন শত শত গাড়ির ইঞ্জিনে পানি লেগে আটকা পড়ে। এ স্থানটি দ্রæত সংস্কার করা জরুরি।’

সাহেবের বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেন, ‘স¤প্রতি ৪ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু কাজটি যদি সঠিকভাবে করা হতো তাহলে ১৫ দিনের মাথায় ভেঙে যাওয়ার কথা নয়। এভাবে দুর্নীতি করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

আম্বরখানা-সালুটিকর সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। যানবাহন নিয়ে চলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে রাস্তাটি। বিভিন্ন স্থানে ক্রাশার মেশিনের পানি জমে থাকে। যা ছোট ছোট যানবাহনের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বার বার এ ব্যাপারে খাদিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানালেও এর কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্কার কাজের ঠিকাদার জুয়েল বলেন, ‘কাজ এখনো চলছে। শেষ কখন হবে জানি না।’ গত ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এসব জানি না। তবে আমার জানা মতে ফেব্রæয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে।’ এসব প্রশ্নে ঠিকাদার জুয়েল একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘রিপোর্ট করইন (করেন)। বেজান করউকা (বারবার করেন)।’ এলাকার শিক্ষার্থী জুনেদ আহমদ বলেন, ‘রাস্তার ভয়াবহ অবস্থার কারণে প্রতিদিন স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় গর্ত সৃষ্টি হয়।’

সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার মো. সাইফুল আজম বলেন, ‘২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এ সংস্কারের কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আমাদের কাছে আবেদন করা হলে আবেদনটি আমরা ঢাকায় প্রেরণ করি।’ এ ব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ বলেন, ‘রাস্তার কাজ চলছে। খুব শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে তাড়াতাড়ি এ কাজ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। আশা করি অল্প কিছুদিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist