ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ১৫ মার্চ, ২০২৪

‘শান্ত দায়িত্ব পেয়ে সেরাটাই খেলেছেন’

নাজমুল হোসেন শান্ত যখন তিন সংস্করণের স্থায়ী অধিনায়কত্ব পান, তখন বিপিএল চলছিল। সেই আসরে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গোটা বিপিএলে একটা ফিফটি, এমনকি একটা ছক্কাও মারতে পারেননি। তবে বিপিএলের পর জাতীয় দলের খেলায় এসে ছন্দহীনতা টের পেতে দিলেন না তিনি। টি-টোয়েন্টিতে জুতসই রান না পেলেও ওয়ানডে সিরিজে দলের প্রবল চাপে অধিনায়কের ব্যাট থেকে এলো দারুণ সেঞ্চুরি। তার সঙ্গে ১৫০ ছাড়ানো জুটিতে ভূমিকা রাখা মুশফিকুর রহিম বলছেন, এটা ওয়ান ম্যান শো। শান্তর রান পাওয়ার পেছনে নেতৃত্বের প্রভাবও দেখেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে লড়াই করতে দেয়নি বাংলাদেশ। ২৫৫ রান টপকে জিতেছে ৬ উইকেটে। ১২৯ বলে ১২২ রানের ইনিংসে মূল নায়ক শান্ত। তার সঙ্গে ১৭৫ বলে ১৬৫ রানের জুটিতে ৭৩ করে ভূমিকা রাখেন মুশফিক। ২৩ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর ৬৯ রানের জুটিতে অবদান আছে মাহমুদউল্লাহরও।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে শান্তকে প্রশংসায় ভাসান মুশফিক। বাঁহাতি ব্যাটারের নেতৃত্বের গুণ আলাদা করে উল্লেখ করেন তিনি, ‘বিপিএলে রান পায়নি, ওটা একটা ভিন্ন সংস্করণ। এটা আরেকটা সংস্করণ। একটা মানুষের ওপর যখন দায়িত্বটা বেশি থাকে, সব কিছু নিয়ে চিন্তা করে। আমার মনে হয় কিছু কিছু মানুষ থাকে তখন তাদের সেরা খেলাটা খেলে। ও এমন একজন মানসিকতার ছেলে ও যত দায়িত্ব পায় সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় ও ওভারকাম করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম ও জাতীয় দলে যখনই আসবে তখনই রান করা শুরু করবে।’

জাতীয় দলে এলেই রান পাওয়া শুরুর কারণ হিসেবে আবহকে বড় কারণ মনে করেন মুশফিক, ‘আবহটা খুব জরুরি। আমরা কখনো আউটকাম নিয়ে চিন্তা করি না। আবহ এমন রাখি যাতে সবার যার যার প্রক্রিয়া যাতে ঠিক থাকে। প্রক্রিয়া ঠিক রেখে যদি শূন্য করে সেটা একটা দিন হতে পারে। ১১টা বা ৭টা ব্যাটসম্যান সবাই তো আর ১০০ করবে না। সে যতক্ষণ তার রুটিনে থাকবে আমার কাছে মনে হচ্ছিল এটা সময়ের ব্যাপার (শান্তর রান পাওয়া)। যেটা বললাম নেতৃত্ব ওর এমন একটা জিনিস যেটা ও উপভোগ করে। চ্যালেঞ্জটা নিতে আগ্রহ থাকে সব সময়।’

শান্তর মধ্যে একটা বদলও দেখছেন মুশফিক। যেটা তাকে আরো বড় ব্যাটার হিসেবে পরিণত করছে, ‘আগে ভালো শুরু পেলে ৫০-৬০ রান করত এখন বড় ইনিংস খেলছে, দলকে জেতাচ্ছে। আজ দেখুন, ১০০ করার পরের বলে যেভাবে মিড অনে অনায়াসে একটা সিঙ্গেল বের করেছে এটাই প্রমাণ করে সে দলের জন্য কত চিন্তা করে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বারবার বলছিল, আমরা যেন ২০-৩০ রান করে হলেও অবদান রাখি, কাউকে যেন সুযোগ না দেই। কারণ ক্রিকেটে যেকোনো কিছু হতে পারে।’

২৫৬ রানের লক্ষ্যে ইনিংসের প্রথম বলেই লিটন দাসকে হারায় বাংলাদেশ। ২৩ রানের ভেতর বিদায় নেন সৌম্য সরকার ও তাওহিদ হৃদয়। ওই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩২ বল আগেই জিততে পারার পেছনে শান্ত-মাহমুদউল্লাহর জুটির বড় কৃতিত্ব দেন মুশফিক, ‘আমাদের জুটি অবশ্যই অনেক ভালো হয়েছে। আলট্রিমেটলি মূল জুটিটা করেছে রিয়াদ ভাই ও শান্ত। ওই সময় বলটা অনেক নতুন ছিল আর শিশির এত প্রভাব ফেলেনি, সিম মুভমেন্ট হচ্ছিল। ওরা আর্লি উইকেট পেয়েছে। কিন্তু দারুণ ব্যাটিং করেছে রিয়াদ ভাই ও শান্তর। রানরেটটা ঠিক ছিল। আমাদের ব্যাটারদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছে। আমরা কখনই রানরেটে পিছিয়ে ছিলাম না। এমন কোনো ফ্যান্সি কিছু করার দরকারও ছিল না। শিশিরের কারণে তাদেরও অনেক সমস্যা হচ্ছিল। শান্ত দুর্দান্ত ব্যাট করেছে। ও পুরোপুরি ডিজার্ভ করে ওয়ান ম্যান শো টু নাইট।’

এদিকে তিন সংস্করণ মিলিয়ে হাসারাঙ্গার ১০০ বল খেলেও আউট হননি কেবল মুশফিক, ডেভিড ওয়ার্নার ও শেই হোপ। বোঝাই যাচ্ছে এই লেগ স্পিনারের কারিকুরি সম্পর্কে বেশ ভালোই ধারণা রাখেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটার। বুধবার রাতেও হাসারাঙ্গা একটুও সমস্যায় ফেলতে পারেননি মুশফিককে। ২৫৬ রানের লক্ষ্যে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ১৬৫ রানের জুটি পান বাংলাদেশের কিপার ব্যাটার। তাতে তিনি করেন ৮৪ বলে ৭৩ রান। ৮ রানের মধ্যে ৩ চার মেরেছেন হাসারাঙ্গাকেই।

শ্রীনিবাসনের মন্তব্য মুশফিককে মনে করাতেই বলে উঠেন, ‘কবে করেছে ভাই এটা?’ যখন বলা হয়, ‘আজই, মুশফিকের অভিব্যক্তিতে সাফল্যের তৃপ্তির হাসি, ‘হাহাহা না, তেমন কিছু না।’

অবশ্যই এরপরই বিশদ ব্যাখ্যায় গেছেন মুশফিক। তিনি কীভাবে হাসারাঙ্গার বিপক্ষে সফল সেটা বলেছেন, আমার কাছে মনে হয় স্বাভাবিক। কিছু বোলার বলেন বা নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষ, অনেক সময় থাকে আপনি যদি ওদের সাথে খেললে আত্মবিশ্বাসী থাকেন। আবার অনেকে আছে ওর বলে বারবার আউট হয়ে যায়। ওরকম স্পেশাল কিছু না। ও যেটা করে আমি পিক করে ফেলি। এটাই আর কিছু না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close