ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ০৩ মার্চ, ২০২৪

‘বুড়ো, কিন্তু এখনো নট আউট’

বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মঞ্চে তামিম ইকবাল ডেকে নিলেন দলের আরো দুই অভিজ্ঞ সদস্য মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। এ দুজনকে টুর্নামেন্টের শিরোপা উৎসর্গ করার পাশাপাশি

টি-টোয়েন্টিতে অভিজ্ঞতার মূল্যের প্রসঙ্গ উঠে এলো ফরচুন বরিশালের অধিনায়কের কণ্ঠে। শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে এ আসরের ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৬ উইকেট হারিয়ে শেষ হাসি হেসেছে বরিশাল। তাদের দলনেতা তামিম হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও সেরা খেলোয়াড়। ফ্রাঞ্চাইজিটির প্রথমবারের মতো বিপিএলের শিরোপা জয়ের পথে ব্যাট হাতে কার্যকর অবদান রেখেছেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে গেছেন তামিম ও মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ খেলে চললেও বাংলাদেশ জাতীয় দলে নিয়মিত নন তিনি। অথচ তাদের নিয়েই শিরোপা উঁচিয়ে ধরার স্বাদ নিয়েছে বরিশাল। যদিও টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বুড়োদের দল’ হিসেবে সমালোচনা চলছিল বরিশাল টিম নিয়ে। ফাইনাল নিশ্চিতের পর গত বুধবার বিষয়টি নিয়ে সমালোচকদের পাল্টা জবাবও দেন মুশফিক। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এইচডি অ্যাকারম্যান এক পর্যায়ে মুশফিকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি কাউকে কোনো অসম্মান না করেই বলছি, এ বুড়োদের মধ্যে এখনো লড়াইয়ের মানসিকতা বাকি আছে।’

মুশফিক জবাব দেন, ‘আমি সেটাই আশা করি। আমরা ভবিষ্যতেও আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’ তার কথা শেষ হতে না হতেই তামিম যোগ করেন, ‘বুড়ো, কিন্তু এখনো নট আউট।’ দুই সতীর্থকে শিরোপা উৎসর্গ করার সঙ্গে তামিম বারবার উল্লেখ করেন বরিশাল দলে মুশফিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা, ‘এ ধরনের টুর্নামেন্টে প্রচুর চাপ থাকে। এখানেই আমাকে মুশিকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। কারণ, সে আমার ওপর থেকে অনেক চাপ সরিয়ে নিয়ে গেছে।’ অভিজ্ঞতার প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ টেনেই কথা শেষ করেন তামিম, ‘একটা সময় ছিল যখন আমরা টুর্নামেন্ট থেকে প্রায় বাদ পড়ে গিয়েছিলাম। আমরা সেমিফাইনালে (নক আউট পর্বে) ওঠা নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। তবে ঠিক এখানেই অভিজ্ঞতার বিষয়টা কাজে এসেছে। অনেক মানুষ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে অনেক কিছুই বলে। তবে আমি মনে করি, অভিজ্ঞতাই মুখ্য। তরুণদের সঙ্গে অভিজ্ঞদেরও দরকার। আমরা আমাদের পরিকল্পনায় অটল ছিলাম এবং এখন আমরা এখানে (বিজয়ী)।’

বিপিএলের প্রথম আসর থেকে নিয়মিত খেলেও দলীয় সাফল্যের ঝুলি শূন্য ছিল মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর। আগে দুবার ফাইনালে নেমেও হতাশার আগুনে পুড়তে হয়েছিল তাদের। তৃতীয় দফায় এসে বরিশালের হয়ে এবার একসঙ্গে আক্ষেপ ঘুচিয়ে কাঙ্ক্ষিত শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন তারা।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মুশফিক বলেন, ‘এটা আমার তৃতীয় ফাইনাল। তামিম ও রিয়াদ ভাইয়ের পাশে থেকে প্রথমবারের মতো জিতে চ্যাম্পিয়ন হলাম। এটা আমার জন্য ভীষণ আনন্দের। সব কৃতিত্ব আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট, সব খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের। তারা প্রচুর পরিশ্রম করেছে।’ মাহমুদউল্লাহ অনুভূতি জানান এভাবে, ‘সত্যিই খুব ভালো লাগছে। প্রথমেই তামিমকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এখানে আমাদেরকে কথা বলতে ডাকার জন্য। এটা ছিল সম্মিলিত দলীয় প্রচেষ্টা।... এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফিট থাকার চেষ্টা করছি। যেখানেই খেলি না কেন নিজের সেরাটা খেলতে চাই।’

এদিকে ইনজুরির কারণে এবার বিপিএলের শুরু থেকে ছিলেন না সাইফুদ্দিন। পিঠের চোট কাটিয়ে প্রথম ছয় ম্যাচ পর দলে আসেন তিনি। এরপর টানা ৯ ম্যাচ খেলে বরিশালের পেস বোলিং আক্রমণের ত্রাতা হয়ে উঠেন ডানহাতি এ পেসার। বিশেষ করে ডেথ ওভারে তার ওপর নির্ভর করেছিল দলটি। ৯ ম্যাচ খেলে টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ ১৫ উইকেট নিয়েছেন সাইফুদ্দিন। প্রতি উইকেটের জন্য খরচ করেছেন ১৫.৬৬ রান করে। ওভারপ্রতি ৬.৮১ করে রান দিয়েছেন ডেথ ওভারে বল করেও। এছাড়া ব্যাটিংয়েও কিছু ম্যাচে রেখেছেন ভূমিকা। ফাইনালে প্রথম ৩ ওভারে রান দিলেও শেষ ওভারে দারুণ বল করেন সাইফুদ্দিন। তিনটি ওয়াইড, একটি নো বল দিলেও আন্দ্রে রাসেলের মতো ব্যাটারকে আটকে রেখে দেন ৭ রান।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে প্রথমবার বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে বরিশাল অধিনায়ক তামিম সাইফুদ্দিনের অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব তোলে ধরলেন, ‘আমার মনে হয়, সাইফউদ্দিনের অন্তর্ভুক্তি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা শিরোপা জিতেছি কিন্তু ওই শেষ ওভারটা অবিশ্বাস্য ছিল। ওখানে যদি ১৫ রানও হয়ে যেত, আমরা হয়তো ১৭০ রান তাড়া করতাম। খেলাটা ভিন্ন হয়ে যেত। সাইফ উদ্দিনের অন্তর্ভুক্তিটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা এ বাজিটা ধরেছি। কারণ কেউ নিশ্চিত ছিল না, সাইফউদ্দিন খেলতে পারবে কি পারবে না। আমার মতে, আমরা সেই সুযোগটা দারুণভাবে নিয়েছি এবং সে খুব ভালোভাবে প্রতিদান দিয়েছে। আমার মনে হয়, তার অন্তর্ভুক্তিটা আমাদের জন্য গেম চেঞ্জার ছিল। শুরুর দিকে আমাদের বোলিং অতটা শক্তিশালী ছিল না। ও আসার পরে... (শক্তি বেড়েছে)।’ গেম চেঞ্জার হিসেবে তামিম মেয়ার্সকে বলছেন অসাধারণ, ‘আমরা যখন শুরুতে দলটা সাজাই মোহাম্মদ আমির, ফখর জামান আসার কথা, শোয়েব মালিক ছিল। এদেরকে রেখে আমরা দল করেছিলাম। খেলা শুরুর ৩-৪ দিন আগে যখন ওই ক্রিকেটারদের ২ জন না আসে, তখন কিন্তু পুরোটা ওলট-পালট হয়ে যায়। মানুষজন তামিম, মুশফিক, (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ, মিরাজদের নিয়ে কথা বলেছে, কিন্তু বিদেশিদের প্রভাবটাও কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ থাকে। বিশেষ করে আমাদের বোলিং বিভাগে। ওখান থেকে আমরা জিতেছি, হেরেছি...।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close