ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

প্রতিবেশীরা এখন বাহবা দিচ্ছেন

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। এ ম্যাচে স্বাগতিকদের বড় ভরসার নাম ফরওয়ার্ড সাগরিকা। টুর্নামেন্টজুড়ে ঝলক দেখিয়ে এরই মধ্যে গণমাধ্যমের নজর কেড়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের এ মেয়ে। মুন্সিয়ানা দেখিয়ে দেশজুড়েই সাড়া ফেলেছেন তরুণী ফুটবলার।

একসময় যে প্রতিবেশীরা সাগরিকার ফুটবল খেলা দেখতেন বাঁকা চোখে, করতেন নানা বাজে মন্তব্য, গুজব রটিয়ে তৈরি করেছেন অস্বস্তি। তারাই এখন ঠাকুরগাঁওয়ের রানি কমল উপজেলায় সাগরিকার খেলা বড় পর্দায় দেখার ব্যবস্থা করেছেন।

চা-বিক্রেতা লিটন আলি ও আনজুমানারা বেগম মেয়ে সাগরিকার ফাইনাল খেলা মাঠে বসে দেখেছেন। সাগরিকার অবশ্য তার বাবা মায়ের ঢাকা আসার খবর জানে না। জানা যায়, সাগরিকার বাবা-মায়ের ঢাকা আসার ব্যবস্থা করেছেন রাঙাউটি গ্রামের তাদের সেই প্রতিবেশীরাই।

নেপালের বিপক্ষে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টিভি ভাড়া করে মেয়ের খেলা দেখেছিলেন তারা। সেই খবর প্রচার হওয়ার পর ওয়ালটন গ্রুপ তাদের একটি টেলিভিশন উপহার দিয়েছে। পরশু সেই টেলিভিশন গ্রহণ করতেই ঢাকা আসেন তারা। বাড়তি হিসেবে থাকছে মেয়ের খেলা সরাসরি দেখার ব্যাপার।

ফুটবল খেলে এ পর্যায়ে উঠে আসতে বিরূপ পরিস্থিতি পার করতে হয়েছে সাগরিকাকে। একবার গুজব ছড়িয়ে যায় যে, সাগরিকা একটি ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছেন। আনজুমানারা প্রতিবেশীদের নিশ্চিত করেন মেয়ে আসলে গেছেন ফুটবল লিগ খেলতে।

আনজুমানারা বলেন, ‘গত বছর প্রতিবেশীরা জানতে চান আমাদের মেয়ে সাগরিকা কোথায়? তারা জানতেন আমাদের মেয়ে একটি ছেলের সঙ্গে লুকিয়ে চলে গেছে। আমরা তাদের প্রমাণ দেখাই যে মেয়ে নারীয় লিগে খেলছে। যে খেলা তাদের সরাসরি মোবাইলে দেখাই। এখন সাগরিকার অর্জনে সবাই খুশি। তারাই আমাদের দেখান যে সাগরিকার ছবি কত বড় করে পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।’

সাগরিকার বাবা লিটন আলি জানান, সেই ঠাকুরগাঁও থেকে বহু কষ্টে ঢাকা এসেছেন তারা, সেসব কষ্ট উরে গেছে মেয়েকে সরাসরি খেলতে দেখে, ‘ঠাকুরগাঁও থেকে আমরা অনেক যন্ত্রণা সয়ে এসেছি, কারণ আমাদের মেয়ে খেলবে। প্রথমবার মাঠে বসে খেলা দেখেছি। আমার মনে হয় তাকে সরাসরি দেখে সব যন্ত্রণা চলে গেছে।’

দরিদ্রতার কারণে মেয়েকে প্রয়োজনীয় কিছু দিতে পারেননি বলেও আক্ষেপ ঝরে তার কণ্ঠে, ‘চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর আগে আমার মেয়ে এক জোড়া বুট চেয়েছিল ৪ হাজার টাকা দামের। আর্থিক কারণে দিতে পারিনি। পরে সাগরিকা আমাকে সান্ত¡না দিয়ে বলে সে মজা করেছে।’ একবার বিকেএসপি থেকে ফেরার পর সাগরিকার সঙ্গে এক মাস কথা বলেননি তার বাবা। সাগরিকা তখন প্রতিজ্ঞা করেন বড় ফুটবলার হবেন, ‘এক মাস কথা বলা বন্ধ রাখার পর সিঙ্গাপুরে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে খেলতে যাওয়ার আগে সে আমার কাছে মাফ চায়।’

পরশু সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ছিল রোমাঞ্চ ও নাটকীয়তায় ঠাসা। রীতিমতো অদ্ভুতুড়ে এক ম্যাচের দেখা মিলল কমলাপুর স্টেডিয়ামের ফাইনালে। টাইব্রেকার নামক স্নায়ু পরীক্ষায় ১১টি শটেও ফল নির্ধারণ হয়নি। হঠাৎ বন্ধ করা হয় সাডেন ডেথ। টসের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় ভারতকে। তারপর অবশ্য দ্রুতই সিদ্ধান্ত বদলায় ম্যাচ সংশ্লিষ্টরা। প্রায় দুঘণ্টা পর বাংলাদেশ ও ভারতকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন বানানো হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close