উপল বড়ুয়া

  ২৪ মে, ২০১৮

ইরানের দ্বিতীয় রাউন্ডের স্বপ্ন

পৃথিবীর প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত অস্তিত্বশীল সভ্যতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম হচ্ছে ইরানি সভ্যতা। তাদের লক্ষ বছরের পুরনো এই সভ্যতার কথা লেখা আছে ‘ইরানি প্লেটে।’ ভোলগা নদী হয়ে আর্যরা আসার আগ থেকেই দেশটি শাসন করত সাসানীয় ও পার্সিয়ানরা। পার্সিয়ান থেকেই পরবর্তীতে উদ্ভব ঘটে পার্সিয়ান সভ্যতার। প্রতœতাত্ত্বিক গবেষণা অনুসারে পারস্যের ইতিহাসের সূচনা ধরা হয়েছে ‘প্যালিওলিথিক’ যুগের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত; যা এক লক্ষ বছরের পুরনো।

প্রাচীন এই দেশটি এবার পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে রাশিয়ায়। পার্সিয়ানরা প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছিল ১৯৭৮ সালে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে তাদের সময় লেগেছে ২০ বছর। এশিয়ার বাছাইপর্ব পার হতে না পারায় টানা পাঁচ বিশ্বকাপে তাদের থাকতে হয়েছে দর্শক হিসেবে। এরপর টিম মেলিরা ফিরে আসে ১৯৯৮ সালে। আসা যাওয়ার মাঝে ইরানিরা আরো দুই বিশ্বকাপ খেলে ২০০৬ ও ২০১৪ সালে। তবে প্রত্যেকবার তাদের ঘরে ফিরতে হয়েছে গ্রুপ পর্বের বাধা পার হতে না পারায়।

ইরান এশিয়ার অন্যতম ফুটবল পরাশক্তি হলেও বিশ্বকাপে তাদের বলার মতো কোনো সফলতা নেই। চার বিশ্বকাপ খেলে দেশটি জয় পেয়েছে মাত্র একটি। ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে ২-১ গোলে হারিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে। এরপর বারবার ব্যর্থতাকেই সঙ্গী করে নিতে হয়েছে টিম মেলিদের। অথচ, এশিয়ার পরাশক্তিরা এশিয়ান কাপ ঘরে তুলেছে টানা তিনবার। ১৯৬৮, ১৯৭২ ও ১৯৭৬ সালে। কিন্তু সেই সোনালি যুগের পর আর একবারের জন্যও এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরতে পারেনি ইরান। এই নিয়ে প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলবে ইরান। প্রথম পর্বেই বারবার ব্যর্থ হওয়া পার্সিয়ানরা এবার স্বপ্ন দেখছে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার। তার জন্য চারটি বছর নিজেদেরকে ঝালিয়ে নিয়েছে ইরানিরা।

বাছাইপর্ব ও সব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দুর্দান্ত পারফম্যান্স দিয়ে ফিফা র‌্যাংকিংয়ের ইরানিরা পেছনে ফেলেছে এশিয়ার সব দেশকে। বর্তমানে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে তারা আছে ৩২ নাম্বারে। এই থেকে বোঝা যায় নিজেদের উন্নতির জন্য দেশটি কতটুকু মরিয়া। র‌্যাংকিংয়ে তারা এর আগেও সফলতা দেখিয়েছিল। ২০০৫ সালে উঠে এসেছিল ১৫ নাম্বারে। তবে মুদ্রার উল্টো পিঠটাও তাদের দেখতে হয়েছে। ১৯৯৬ সালে ১২২ নাম্বারে নেমে গিয়েছিল পার্সিয়ানরা।

ইরানিদেরকে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে নেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন অলিম্পিয়াকোস ফরওয়ার্ড করিম আনসারিফার্দ। গ্রিক ক্লাবটিতে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। এরপর থেকে হয়ে উঠেছেন দলের মূল খেলোয়াড়। গোল করার জন্য ক্লাব সতীর্থরা তাকে ডাকে ‘সাকসেসর’ নামে।

এ ছাড়া স্পটলাইটটা নিজের দিকে টেনে নিতে চাইবেন রুবিন কাজান স্ট্রাইকার সরদার আজমাউন। ২০১৪ সালে ইরানের জার্সিতে অভিষেকের পর ৩১ ম্যাচে ২৩ গোল করেছেন এই ২৩ বছর বয়েসী ফুটবলার। ডি-বক্সের ভেতরে যেকোনো মুহূর্তে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন তিনি। বিশেষ করে গোল করার ক্ষমতাটা যেন তার সহজাত।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ইরানিদের ভরসার নাম হয়ে উঠতে পারেন গোলরক্ষক আলিরেজা বেইরানবান্দ। ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা এই গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে গোল করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের জন্য। এ ছাড়া ইরানিদের মধ্যমাঠে খেলাটা তৈরি করে দিতে প্রস্তুত আছেন অলিম্পিয়াকোস মিডফিল্ডার এহসান আজসাফি ও নটিংহাম ফরেস্টের আশকান ডেজাগাহ। আসন্ন বিশ্বকাপে ইরান খেলবে পর্তুগিজ কোচ কার্লোস কুয়েইরোজের অধীনে। আর মাঠে দলকে নেতৃত্ব দিবেন গ্রিক ক্লাব এইকে অ্যাথেন্সের মিডফিল্ডার মাসোদ শোজায়ি।

এবার শেষ ষোলোতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখলেও প্রথম পর্বেই অগ্নিপরীক্ষা মুখোমুখি হতে হবে ইরানকে। কারণ ‘বি’ গ্রুপে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে ২০১০ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন স্পেন, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল ও মরক্কোকে। দেখার বিষয়, কোনো অঘটন ঘটিয়ে ইরান গ্রুপ পর্ব পার হতে পারে কিনা, নাকি পঞ্চমবারের মতো খালি হাতে ঘরে ফিরে। আগামী ১৫ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গে মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে পার্সিয়ান সভ্যতার ধারক ইরানিরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist