শফিক শাহরিয়ার

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

সোনার ছেলে

কালো মানেই কুৎসিত নয়। এ কথা সবারই জানা। কালো মানুষেরও ভালো গুণ থাকে। তার মনটা কালো না-ও হতে পারে। মায়ের কাছে কালো-সাদার কোনো বিভেদ থাকে না। মায়ের কাছে কালো ছেলে কখনো কালো নয়, বরং সোনার ছেলে। হোক সে কালো, তাতে বিন্দুমাত্র ভালোবাসার কমতি নেই। মায়ের কাছে সব ছেলেই সমান। লোকের নিন্দায় কিচ্ছু যায় আসে না। মায়ের মধুর কথায় ছেলেটির প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

কয়েক বছর আগের কথা। শহরের ছেলে রাকিব, গায়ের রং কালো। জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ভালো ফলাফলও করেছে। রাকিবের মা নতুন একটি প্রাইভেট টিচারের খোঁজ পান। এক দিন সকালে টিচারকে বাসায় ডাকলেন। রাকিবের বাবা একজন ব্যবসায়ী। কিছু কথা বলে দোকানে চলে গেলেন। তার প্রাইভেটের কথা পাকাপাকি। মা ছেলেটির পড়াশোনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছেন। একমাত্র ছেলে রাকিব। মা তাকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন।

স্কুল থেকে এলেই ছেলেটি প্রতিদিন কারো না কারো বাসার ছাদে ওঠে। কারো কারো বাসার ছাদে কবুতরের ছোট-বড় টোঙ দেখা যায়। কালো, সাদা- আরো কত্ত রঙের কবুতর! রাকিব কবুতরের কথা কিছুতেই ভুলতে পারে না। কবুতরের সঙ্গে অনেক সময় খেলাধুলা করে। পড়াশোনার অনেক সময় নষ্ট করে। বাবা সেজন্য বাড়িতে কবুতর পুষতে দিতে চায় না। কবুতর পোষা ওর খুব প্রিয় শখ। রাকিব তখন স্কুলে ছিল।

কিছুক্ষণ পর দরজায় কলিং বেল বাজল। মা দরজা খুলে ছেলেকে টিচারের রুমে নিয়ে এলেন। টিচারকে সালাম দিলেন। কুশলবিনিময় করল। মা আদর করে ছেলেটিকে বুকে টেনে নিলেন। টিচারকে বললেন, এই তো আমার সোনার ছেলে। কত আদরের ছেলে! টিচার রাকিবকে খুব কাছাকাছি বসতে বললেন। ছেলেটি কালো হলেও দেখতে মায়াবী। গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। টিচার রাকিবের কথায় মুগ্ধ হন। কাল থেকে বিকালে প্রাইভেট পড়াবেন। বললেন, ‘পড়াশোনায় খুব মনোযোগী হও। কবুতরের শখ আস্তে আস্তে ছেড়ে দাও।’ পরের দিন থেকে টিচার নিয়মিত পড়াতে আসেন।

স্কুলে অনেকেই তাকে কালু, কালা, কালুয়া ইত্যাদি আজেবাজে নামে ডাকে। রাকিব খুব কষ্ট পায়। মনও খারাপ হয়। স্যারকে বিচার দেয়। স্যার কাউকে যতই বকুক, যতই মারুক- তাতেও কোনো লাভ হয় না। স্যারের সামনে তাকে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করার সাহস কেউ পায় না। পরক্ষণে যেই লাউ, সেই কদু। আবার আগের মতোই ওদের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

এমনকি কালো বলে কেউ কেউ পাশে বসতে চায় না। রাকিব বাসায় এসে মাকে প্রতিদিনই এসব কথা বলে। মাঝেমধ্যে স্কুলে যেতেও আপত্তি করে। মা বুঝিয়ে-শুনিয়ে আবার স্কুলে পাঠায়। সোনার ছেলেটিকে দেখে মায়ের বুকটা নিমিষেই ভরে ওঠে। মায়ের সান্ত¡নার ভাষায় ছেলেটি তার সব ব্যথা ভুলে যায়। রাকিব এখন খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করে। দিনে দিনে কবুতর পোষার শখ কমিয়ে দেয়। মা ভাবেন, এক দিন সোনার ছেলেটি আমার অনেক বড় হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close