শওকত আলী রতন

  ১৮ মার্চ, ২০২৩

যত্নে রাখুন বই

বই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। হাসি-আনন্দ সব সময়ের জন্য বই ভালো কাজ করে থাকে। জ্ঞান আহরণ কিংবা আনন্দের জন্য বই পড়া অত্যাবশ্যক। বইপাগল যারা তারা যেকোনো মূল্যেই হোক তাদের বইগুলোকে যত্নে রাখেন। এজন্য আমাদের মধ্যে যারা বই পড়ে তাদের প্রত্যেকের বই সংরক্ষণের জন্য একটি আলাদা জায়গার প্রয়োজন। আর তা সম্ভব না হলেও অন্তত বইয়ের জন্য একটি বুক শেলফ থাকা খুবই জরুরি।

বিক্ষিপ্তভাবে বই রাখলে একসময় হারিয়ে যেতে পারে আপনার মূল্যবান বইগুলো। মাঝে মাঝে কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বইগুলোকে যত্নে রেখেও তা ভালো রাখা যায় না। অনেক কারণে বইয়ের ক্ষতি হতে পারে। যেমন : পোকায় কাটতে পারে, আর্দ্রতার কারণেও বইয়ের ক্ষতি হতে পারে।

সদ্য সমাপ্ত অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে প্রিয় লেখকের বই কিনে অযত্নে ফেলে রেখেছেন? মনে রাখতে হবে বই এক দিনের জন্য নয়, একটু যত্ন নিলেই যুগ যুগ ধরে পাঠের উপযোগী রাখা সম্ভব। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বইপাঠের মাধ্যমে কল্যাণ পেতে পারে। মনে রাখা উচিত, বই শুধু মানুষের বন্ধু নয়, ঘরের শোভাবর্ধনের মাধ্যম। ঘরের অন্যান্য আসবাবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বইয়ের তাক নির্বাচন করে অন্দরকে করে তুলুন অতুলনীয়। বইয়ের তাকে রয়েছে এখন নানা রকমের নকশার সমাহার। বুক শেলফের রং, ঘরের ফার্নিচার ও ফেব্রিকসের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়াটাও সমীচীন। একটু সচেতনতাই আপনার প্রিয় বইগুলো অক্ষত থাকবে দীর্ঘদিন। বই ভালো রাখার কিংবা বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কিছু সহজ কৌশল হলো বইয়ের যত্নের প্রথম এবং মুখ্য বিষয় হলো বই সাজানো। ভালোবাসার বইগুলো আলমারি কিংবা শেলফে সাজিয়ে রাখতে হবে। বই সাজাতে খেয়াল রাখতে হবে যেন বইগুলো গাদাগাদি করে না থাকে। হাওয়া-বাতাস ঢুকতে না পারলে আর্দ্রতার কারণে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বই আকৃতি অনুযায়ী বড় বইগুলো এক সারিতে ও ছোট বইগুলো আরেক সারিতে রাখলে ভালো হয়। ছোট-বড় বই একসঙ্গে রাখার কারণে বই অনেক সময় বাঁকা হয়ে যায়, এতে জায়গাও বেশি লাগে।

বইগুলো একটার ওপর একটা সাজিয়ে স্তূপাকার করে না রাখাই ভালো। এমন বোর্ড বানানো উচিত, যেন বইয়ের কোনাগুলো নষ্ট না হয়ে যায়। অনেকেই বইয়ের পাতা ওল্টানোর সময় থুথু ব্যবহার করেন। এ ধরনের অভ্যাস পরিহার করতে হবে। এটি অস্বাস্থ্যকর তো বটেই, সঙ্গে বইও নষ্ট হয়। বই পড়তে পড়তে কোথাও যদি থেমে যান। তখনই জায়গাটি মনে রাখার জন্য সুবিধামতো কলম বা পেনসিল দিয়ে দাগ দিয়ে রাখেন। ব্যক্তিগত বই না হলে এই দাগ কাটা থেকে বিরত থাকুন। এটা অন্যের পছন্দ নাও হতে পারে, বই পড়ার সময় পাতা ভাঁজ করা উচিত নয়। পাতায় চিহ্ন দেওয়ার জন্য বুক মার্কার বা টুকরো কাগজ ব্যবহার করুন। কিছু কিছু বই আর ডায়রিতে ফিতা দেওয়াই থাকে, যা বুকমার্ক হিসেবে কাজ করে। তবে অনেক পাঠক ভিন্ন ধরনের বুকমার্ক ব্যবহার করে থাকেন। বইপড়া শেষে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিন।

যেখানে-সেখানে ফেলে রাখলে খুব দ্রুত নষ্ট হতে পারে। বই সব সময়ের জন্য শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে, তারা হাতের কাছে বই পেলে ছিঁড়ে ফেলবে। খাবার-খাওয়ার সময় বই না পড়াই ভালো। অসতর্কাবস্থায় খাবার বইয়ের মধ্যে পড়ে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বই সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সহজে খুঁজে পেতে বইয়ের গায়ে লেভেল ও ট্যাগ লাগান। বুক-শেলফটিতে বিষয় অনুযায়ী লেভেল ব্যবহার করতে পারেন। বুক-শেলফ নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। এতে ধুলোবালি জমে বই নষ্ট হবে না। শেলফ থেকে বই নামানোর সময় পুরো বই ধরে নামান। শুধু ওপরের অংশ ধরে টানলে বই নষ্ট কিংবা ছিঁড়ে যেতে পারে।

অল্প জায়গার মধ্যে বুক-শেলফ তৈরি করতে হলে বাতাস চলাচলের জায়গা বেছে নিন। বই বাঁধতে রাবার ব্যান্ড কিংবা শক্ত দড়ি ব্যবহার না করাই ভালো। এতে বইয়ের পাতা বা মলাট ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। অন্য কোথাও বই পাঠাতে হলে বাক্সে ভরে অথবা বড় খামে পাঠাতে পারেন। বুক-শেলফে অবশ্যই ন্যাপথলিন রাখুন, এতে পোকামাকড় কম হবে এবং দুর্গন্ধ ছড়াবে না। বছরে অন্তত দুবার সব বই বের করে খোলা স্থানে রাখুন। হালকা রোদে কিছুক্ষণ বই রাখতে পারেন। এতে বইয়ের গায়ে যদি কোনো ধরনের ফাঙ্গাস লেগে থাকে তা দূর হয়ে যাবে। শুকনো সুতির কাপড় দিয়ে ভালো করে সব বই মুছে নিন। এতে বইয়ের ওপরে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close