উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

  ২০ অক্টোবর, ২০১৭

উখিয়ার ৬ হাজার একর বন এখন ‘ন্যাড়া ভূমি’

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া-টেকনাফ রেঞ্জের প্রায় ছয় হাজার একর বনভূমিতে রোহিঙ্গাদের বসতি। এসব পাহাড়ের শত শত একর বন এখন ন্যাড়া ভূমিতে পরিণত করেছে রোহিঙ্গারা। পাহাড়ে একটার সঙ্গে একটা লাগোয়া ঝুপড়ি তৈরি করতে গিয়ে নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রোহিঙ্গাদের দখলে চলে যাওয়া রাস্তার পাশের পাহাড়গুলো থেকে ঝুপড়ি তুলে দেওয়ার পর এই ন্যাড়া পাহাড় দৃশ্যমান হচ্ছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।

স্থানীয় সূত্রমতে, পৃথকভাবে রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফ রেঞ্জের প্রায় ছয় হাজার একর বনভূমি নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছে। এসব পাহাড়ে প্রতিদিনই ইচ্ছেমতো নতুন বস্তি তৈরি করছে তারা। ক্যাম্পের ঘিঞ্জির বাইরে গিয়ে ঝুপড়ি ঘর তুলছে অনেকে। পুরোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাস্তার পাশের পাহাড়ে ঘর তুললেও ২০১২ সালে ও সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাহাড়ে আবাস গড়ছে। ইচ্ছেমতো গভীর বনে ঢুকে বাড়ি করায় নষ্ট হচ্ছে বন্য প্রাণীর আবাসস্থলও।

চলাচল সুবিধার কথা চিন্তা করে অনেকে রাস্তার পাশে সামাজিক বনায়ন করা পাহাড়েই ধাপে ধাপে ঝুপড়ি গড়ে। ঘরে শোয়ার পজিশন তৈরি করতে গিয়ে মাটি সমানও পরিষ্কার করতে হয়েছে সবাইকে। ফলে নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে সামাজিক বনায়নের গাছসহ বনজগুল্ম। এ কারণে সহজে ন্যাড়া ভূমিতে পরিণত হয়ে যায় অনেক পাহাড়। কিন্তু ঝুপড়ি থাকা পর্যন্ত পাহাড়ের এই দুরবস্থা চোখে পড়েনি কারো। কিন্তু রাস্তার পাশের যত্রতত্র ঝুপড়ি তুলে দেওয়ার পর দৃশ্যমান হয় পাহাড়ের ন্যাড়া হওয়ার করুণ চিত্র।

রোহিঙ্গা বসতির বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যে কয়েকটি পাহাড় দখলমুক্ত হয়েছে সেগুলোতে এখন আর সবুজের চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। কেটে ফেলা হয়েছে গাছ। লতাপাতা-গুল্ম কিছুই আর নেই। মাটি কেটে ঘর বানানোর কারণে বদলে গেছে পাহাড়ের আকৃতিও। সবুজ বনাঞ্চল উজাড় হয়ে সেই পাহাড়গুলো এখন পরিণত হয়েছে বিরাণভূমিতে। যেসব পাহাড়ে এখনো রোহিঙ্গাদের বসতি আছে সেগুলোতেও চোখে পড়ে না সবুজ গাছপালা।

বালুখালীর বাসিন্দা সৈয়দ আকবর বলেন, রোহিঙ্গারা বসতি গড়ার পাশাপাশি গাছ, লতাপাতা-গুল্ম জাতীয় বনজ ঝোপঝাড় কেটে উজাড় করছে। ঘর তুলতে গিয়ে পাহাড়ের মাটির সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মূল ও শেকড় তুলে ফেলছে তারা। একের পর এক পাহাড় কেটে ন্যাড়া করছে।

কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্রমতে, উখিয়া রেঞ্জে কুতুপালং, থাইংখালী, বালুখালী-১, বালুখালী-২, মধুরছড়া, তাজমিনার ঘোনা, নকরার বিল, সফিউল্লাহ ঘাটা, বাঘঘোনা ও জামতলীসহ আশপাশের পাহাড় কেটে প্রায় তিন হাজার একর জায়গায় রোহিঙ্গারা বসতি গড়ে তুলেছে। এ ছাড়া টেকনাফ রেঞ্জে ৪৫০ একর, হোয়াইক্যং (পুটিবুনিয়া) রেঞ্জের ৫০ একর এবং শিলখালী রেঞ্জের ৩৭৫ একর পাহাড়ি বন কেটে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আলী কবির বলেন, সম্প্রতি আমরা একটি জরিপ সম্পন্ন করেছি। এতে দেখা যাচ্ছে উখিয়া ও টেকনাফের বালুখালী, তাজমিনার ঘোনা, নকরারবিল, কেরনতলী, পুটিবুনিয়া, বালুখালীরঢালা, কুতুপালংয়ের অতিরিক্ত অংশ, সফিউল্লাহ ঘাটা এবং বাঘঘোনাসহ আরো একাধিক পয়েন্টে প্রায় আড়াই হাজার একরের মতো বনভূমিতে ইতোমধ্যে রোহিঙ্গারা বসতি স্থাপন করেছে। এর মধ্যে এক হাজার ৫০০ একরের মতো সামাজিক বনায়ন এলাকা ছিল, যেখানে স্থানীয় দরিদ্র উপকারভোগীদের জন্য বাগান করা হয়। বাকি ৯০০ একরে প্রাকৃতিক বন ছিল। এর বাইরে আরো প্রায় ৩০০ একর পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের বসতি আছে যেগুলো এখন বিরাণভূমি।

জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র খালেদ মাহমুদ বলেন, নিজ দেশে উদ্বাস্তু হয়ে আসা রোহিঙ্গারা মানবিক আশ্রয় পেয়ে উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ের প্রকৃতির ওপর নির্বিচারে নির্যাতন চালিয়েছে। এটি নজরে আসায় মানবিকতার পাশাপাশি প্রকৃতি রক্ষায় রোহিঙ্গাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিতে তিন হাজার একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সবাইকে বালুখালীতে নির্ধারিত ক্যাম্পে যেতে হবে। শুধু পাহাড় নয়, নির্ধারিত ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গারা কেউ থাকতে পারবে না। সব রোহিঙ্গাকে নির্ধারিত জায়গায় নেওয়ার পর পাহাড়গুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করবে বন বিভাগ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা,উখিয়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist