নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ আগস্ট, ২০১৭

গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপ

চাপের ঊর্ধ্বে থেকে ইসিকে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সরকার যেই থাকুক না কেন চাপের ঊর্ধ্বে থেকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দায়িত্ব পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করারও আহ্বান জানান তারা। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে পরিবেশ তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করার জন্য ইসিকে পরামর্শ দেন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।

শেরে বাংলা নগরের নির্বাচন কমিশন ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের সংলাপে নির্বাচন কমিশনকে এসব পরামর্শ দেন তারা। এ সংলাপে অনলাইন নিউজ পোর্টাল, রেডিও এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নুরুল হুদা সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার, ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ ইসির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ঘোর বিরোধিতা করে বলেন, নির্বাচনের এখনো দেড় বছর বাকি রয়েছে। নির্বাচনে সেনা বাহিনী লাগবে নাকি আনসার বাহিনী লাগবে সেটা আমরা এখনো জানি না। কিন্তু এত আগে সেনা বাহিনীর কথা বলার মধ্যে কোনো মতলবি আছে কী না আমাদের ভাবতে হবে। সেনাবাহিনীর গৌরবকে বিতর্কিত করার চেষ্টা কী না চিন্তা করতে হবে।

সেনা মোতায়েনের বিষয়ে একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু বলেন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কী না সেই বিষয়ে কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেউ রাজনৈতিক কারণে সেনা মোতায়েনের কথা বললে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেনাবাহিনীকে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে এ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করা যাবে না।

তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা সহায়ক সরকারের বিরোধিতা করে বলেন, নির্বাচন কমিশন হচ্ছে রেফারি আর রাজনৈতিক দল হচ্ছে প্লেয়ার। তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। ইসিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা কী জনপ্রিয় হতে চান নাকি আইনি কাঠামোর মধ্যে চলতে চান। জনপ্রিয় হতে চাইলে সরকারি দলকে নির্বাচনে হারিয়ে দিন।

তিনি বলেন, আগে ভোটার নম্বর আর ভোটার আইডির মধ্যে মিল ছিল। এখন সেটা আর নেই। এতে কার্ড নিয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের সমস্যায় পড়তে হয়। তিনি তার প্রস্তবে ভোটারদের আইডি কার্ডের নম্বর ও ভোটার নম্বর এক করার কথা বলেন। প্রত্যেকটি কেন্দ্র টেলিভিশন ক্যামেরার আওতায় আনার কথা বলে তিনি বলেন, বর্তমানে ৪০টি টেলিভিশন রয়েছে। সকলে সমন্বয় করে আমরা ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করতে চাই। এই সক্ষমতাও আমাদের রয়েছে।

সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার আমির খসরু বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী ভূমিকা পালন করে সেই অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। এজন্য জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন জরুরি।

নতুন আইন প্রণয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেবল আইন করলেই হবে না। সেগুলো বাস্তবায়নের সক্ষমতা ইসির রয়েছে কী না সেটা ভাবতে হবে। তিনি বলেন, কেবল নিরপেক্ষতার কথা বললেই হবে না। ইসিতে তার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষতার প্রমাণ আগেই দেখাতে হবে। তাদের নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান করতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনকালীন মনে করলে চলবে না। এটা ভাবলে ইসি ভুল করবেন। বর্তমানে মাঠে যারা রয়েছে তারা সকলেই সমান সুযোগ পাচ্ছে কী না সেটা দেখতে হবে। খসরু তার প্রস্তাবে যে নামেই হোক নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ সরকারের দেন।

চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ বলেন, নির্বাচনের সময় ফলাফল প্রকাশে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যায়। এ জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষণার আগে যেন কেউ প্রকাশ না করে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তারা যাতে দ্রুত ফল ঘোষণা করেন তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের নিরপেক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

এনটিভির খায়রুল আনোয়ার বলেন, আমরা চাই গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আর এ জন্য ইসিকে তার সক্ষমতা ও সাহস দেখাতে হবে। সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। তফসিল ঘোষণার আগে দায়িত্ব নেই- এই মানসিকতা ত্যাগ করে এখন থেকে দায়িত্ব পালন করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। দীপ্ত টিভির মাহমুদুল করিম চঞ্চল বলেন, নির্বাচনের সময় যে ৪০ হাজার প্রিজাইডিং অফিসার থাকবেন তারা নিরপেক্ষ না হলে শত চেষ্টা করলেও নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।

বাংলা ভিশনের মোস্তফা ফিরোজ বলেন, বর্তমান বিধান অনুসারে নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হবে। কাজেই দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচনের রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক থাকলে সেনাবাহিনী তো দূরের কথা আনসার বাহিনীও প্রয়োজন পড়বে না।

মোস্তফা ফিরোজ তার প্রস্তাবনায় জাতীয় নির্বাচনে একাধিক দফায় ভোটগ্রহণ ও নোটিস দিয়ে নিবন্ধিত দলগুলোর ধর্মীয় নাম বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেন।

ডিবিসির মঞ্জুরুল ইসলাম তার বক্তব্যে প্রবাসীদের ভোটার করা ও তাদের ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত, নির্বাচনী ব্যয় বাস্তবসম্মত করা, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ও পোলিং এজেন্টদের অতীত ইসিহাস যাচাই করা, পরাজিত দলের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা, নিবন্ধিত দলের আয়-ব্যয়ের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মকা-ের বাৎসরিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিধান চালুর কথা বলেন।

ইনডিপেনডেন্ট টলিভিশনের খালেদ মুহীউদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি নয়, তাদের কাজ জনগণের আস্থা অর্জন করা। তাদের সেটা করতে হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী প্রয়োজন পড়বে কী না তারা নিজেরাই সেই বিষয়টি ঠিক করবেন। নির্বাচনের দেড় বছর আগে এসে নতুন কিছু যোগ-বিয়োগ করার কোনো দরকার নেই। এটা করতে গেলে আরো অনাস্থা তৈরি হবে।

আরটিভির সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, নির্বাচনের সময় ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে টিভি ক্যামেরা বসানোর সুযোগ দেওয়া হলে কারচুপি ৯৯ শতাংশ কমে যাবে। যমুনা টেলিভিশনের ফাহিদ আহমেদ তার প্রস্তাবে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ইসির ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন। তিনি কিছু আসন পুনর্বিন্যাস ও ‘না’ ভোট চালুর বিধান যুক্ত করার পরামর্শ দেন।

মাছরাঙা টেলিভিশনের রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, নির্বাচনের সময় ভোট কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের হাতে থাকতে হবে। তিনি বলেন, লেভেল প্লেইং ফিল্ড বা সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ ইসির কাজ নয়। তাদের কাজ হচ্ছে যারা নির্বাচনে আসবে তাদেকে সকলকে সমান সুযোগ দেওয়া। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় না জড়িয়ে আইনের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে গেলে ইসি আরো বিতর্কিত হবে। সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনা বাহিনী যত না টানা যায় ততই ভালো। কারণ অতীতের নির্বাচনে সেনা থাকার পরও আমরা সেখানে বিতর্ক দেখতে পেয়েছি। তিনি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনার কথা বলেন।

সংলাপে আরো অংশ নেন বিটিভির মহাপরিচালক এস এম হারুন-উর-রশীদ, একুশে টিভির হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী, সময় টেলিভিশনের বার্তা প্রধান তুষার আবদুল্লাহ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মুরসালীন নোমানী, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ইনপুট এডিটর তালাত মামুন, দেশ টেলিভিশনের হেড অব নিউজ সুকান্ত গুপ্ত অলোক, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক ফাহিম আহমেদ, মাইটিভির বার্তা বিভাগের পরিচালক জেকের উদ্দিন সম্রাট, এসএ টিভির বার্তা সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, রেডিও টুডের বার্তা প্রধান সেলিম বাশার, এশিয়ান টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক বিল্লাল হোসাইন বেলাল, দীপ্ত টিভির বার্তা সম্পাদক মাহমুদুল করিম চঞ্চল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist