আমিনুল ইসলাম হুসাইনী
ইতিকাফে নারীদেরও উৎসাহিত করুন
আজ উনিশে রমজান। মাগফিরাতের আছে আর মাত্র এক দিন। আগামীকালের সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মাহে রমজানের শেষ দশক। এই দশক নাজাতের দশক হিসেবে পরিচিত। এই দশ দিনে রাব্বুল আলামিন অগণিত গুনাহগার বান্দাকে নাজাত দেবেন। এই দশ দিনের মাঝেই লুকিয়ে আছে মহিমান্বিত ‘লাইলাতুল কদর’। কোরআনের ভাষায় যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এই শ্রেষ্ঠ রজনী অর্জনের জন্যেই রাসুল (সা.) ইতিকাফ করতেন। সাহাবাদেরও ইতিকাফের তাগিদ দিতেন। ইতিকাফের মূল মাকসাদ লাইলাতুল কদর হলেও এর আরো বহু ফজিলত রয়েছে। হাদিসে এসছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতকাফ করবে, আল্লাহতায়ালা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। প্রতি খন্দকের দূরত্ব আসমান জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান।’ (শুয়াবুল ইমান, ৩/৪২৫)
নারীরাও ইতিকাফে অংশ নিয়ে এই ফজিলত অর্জন করতে পারেন। তারাও এই আমলের মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেন। জান্নাতের শ্রেষ্ঠ স্থানে আসীন হতে পারেন। ইসলাম নারী-পুরুষকে কখনোই বৈষম্যের দৃষ্টিতে দেখে না। এখানে হিসেব হবে আমলের প্রেক্ষিতে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কি পুরুষ কি নারী, যে কেউ নেক আমল করবে, সে মুমিন। নিশ্চয় আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ (সুরা নাহল, আয়াত ৯৭)
লাইলাতুল কদর অর্জন আর জাহান্নামের নিকষ আগুন থেকে বাঁচতে মা-বোনদেরও ইতিকাফ করা উচিত। নবীজির পবিত্র স্ত্রীরা নিয়মিতই ইতিকাফ করতেন। আম্মাজন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘নবীজি (সা) মৃত্যু পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছন। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীরা ইতিকাফ করেছেন।’ (বোখারি, হাদিস ২০৩৬)
নারীর ইতিকাফ কিছুটা ভিন্ন। পুরুষ ইতিকাফ করবে মসজিদে। আর নারী ইতিকাফ করবে ঘরে। পুরুষের জন্যে ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া হলেও নারীর জন্যে তা মুস্তাহাব। তবে নারীকে বাড়তি নিয়ম হিসেবে যোগ করতে হবে স্বামীর অনুমতি। আর স্বামীদেরও উচিত যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের ইতিকাফে বাধা না দেওয়া। তাদের ইতিকাফের সুযোগ করে দেওয়া। এতে উভয়ই সওয়াব পাবেন। (রদ্দুল মুখতার ২/৪৪১)
নারী যেভাবে ইতিকাফ করবেন-
ঘরে যদি আলাদা রুম থাকে তাহলে সে রুমে ইতিকাফ করবে। আর যদি না থাকে, তাহলে ঘরের এক কোণে পর্দা টেনে নেবে। যেন ঘরে বেগানা পুরুষ লোক এলে তাকে স্থান পরিবর্তন করতে না হয়। পর্দা টেনে নিলে ঘরের লোকদেরও খেয়াল থাকে যে, তিনি ইতিকাফে আছেন। তাকে ডিস্টার্ব করা যাবে না। বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, কালিমা পাঠ, দরুদ পাঠ, তওবা ইস্তিগফার ও ধর্মীয় বইপত্র পড়ার মধ্য দিয়ে সময়কে কাজে লাগাতে হবে। পরিবারের লোকদের সঙ্গে অযথা কথা বলা, গল্পগুজব করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কয়েকটি মাসয়ালা-
১. ইতিকাফরত অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে সহবাস কিংবা উত্তেজনাবশত স্বামীকে চুম্বন, আলিঙ্গন করা যাবে না। (ফাতাওয়া আলমগিরি ১/২১৩)
২. ঋতুস্রাব অবস্থায় ইতিকাফ করা সহি নয়। কেন না এই অবস্থায় রোজা রাখা যায় না। আর সুন্নত ইতিকাফের জন্যে রোজা রাখা শর্ত। (ফাতাওয়া আলমগিরি ১/২১১)
৩. ইতিকাফ শুরু করার পর ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। পরে শুধু এক দিনের ইতিকাফ রোজাসহ কাজা করতে হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৫০২)
লেখক : প্রাবন্ধিক, খতিব কসবা মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
"