প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিবিসিকে প্রধানমন্ত্রী

অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করছি

প্রয়াত ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে বিবিসিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি নিজে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল শুধু আওয়ামী লীগের শাসনামলে।

আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে তার সরকারের প্রতিশ্রুতি-সংক্রান্ত বিবিসি সাংবাদিক লরা কুনেসবার্গের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠার জন্যই আমার সংগ্রাম। রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রচারিত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুমের বিষয়ে অনেকেই অভিযোগ করতে পারেন, কিন্তু তা কতটা সত্য তা বিচার করতে হবে। এটা জানার আগে কেউ কোনো মন্তব্য করবেন না। প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, তার দেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, প্রকাশ্যে বা গোপনে সামরিক শাসকরা ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে আমার বাবাকে (জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) হত্যা করা হয়। তিনি তখন দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং আপনি জানেন যে আমার পুরো পরিবার, আমার মা, আমার তিন ভাই, দুই ভাতৃবধূ, পরিবারের অন্য সদস্যসহ ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, তারপর থেকে ২১ বছর ধরে, যে দেশটি বারবার অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেছে।

তিনি যোগ করেন যে প্রায় ২০ বার অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে এবং প্রতিবার রক্তপাত হয়েছে। শেখ হসিনা বলেন, সেখানে গণতন্ত্র ছিল না, গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, তাই আমি আমার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছি। বিবিসিকে তিনি বলেন, সামরিক শাসকরা দীর্ঘদিন ধরে দেশ শাসন করেছে এবং তারা দল গঠন করেছে এবং ভোটের জন্য তারা কখনো জনগণের কাছে যায়নি। তারা (সামরিক স্বৈরশাসক) সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে, প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য সবকিছু ব্যবহার করেছে।

নিখোঁজের অভিযোগের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বিবিসি সাংবাদিককে প্রশ্ন করেন, আপনার দেশে এবং অন্যান্য দেশে কত লোক নিখোঁজ হয়েছে? আপনি বিচার করতে পারেন। এসব বিষয় আমি মনে করি, প্রথমে আপনাকে বিবেচনায় নিতে হবে। সমস্ত তথ্য আপনার সংগ্রহ করা উচিত, তারপর আপনি অভিযুক্ত করতে পারেন।

আপনার এবং বাংলাদেশের কাছে কমনওয়েলথের গুরুত্ব কতটা, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই এর মূল্য অনেক বেশি, যখন আমরা একসঙ্গে থাকি, সেখানে অনেক সুযোগ থাকে, তাই, এটা ভালো এবং গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের একটা জায়গা আছে যেখানে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করতে পারি। কিছু ধারণা গ্রহণ করতে পারি বা দেশ বা জনগণের জন্য কিছু ভালো কাজ করতে পারি। তাই, আমার মনে হয় এটা ভালো।

তিনি বলেন, বর্তমানে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, একটি দেশ একা চলতে পারে না। কারণ, এটি একটি আন্তনির্ভর বিশ্ব। সুতরাং, এই পরিস্থিতিতে সদস্য দেশগুলোর জন্য কমনওয়েলথের অর্থ অনেক বড়। প্রতিটি দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে- কারণ, অনেক দেশ আছে উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ এবং দরিদ্র দেশ, ছোট দ্বীপ দেশ।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতি নিয়ে, তিনি বলেন, এটি ১৯৬১ সালে যখন তিনি (রানি) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সফর করেছিলেন এবং তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে প্রথমবার দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, তখন আমরা খুব ছোট এবং আমার বাবার (বঙ্গবন্ধুর) অফিসে গিয়েছিলাম। কারণ, আমরা জানতাম যে তিনি সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাই, আমরা পুরো পরিবার দুরবিন নিয়ে জানালায় অপেক্ষা করেছি। ফলে, আমরা তাকে আরো স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছি। তিনি যোগ করেন যে যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তিনি প্রতিটি কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে রানির সঙ্গে দেখা করেছেন।

আমি প্রায় সাতটি কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছি। প্রতিবারই আমি তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। প্রয়াত রানির আমন্ত্রণে তিনি অলিম্পিক গেমসে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বলে তারা দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন।

প্রয়াত রানির সঙ্গে সুন্দর স্মৃতির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (রানি) চমৎকার স্মৃতিশক্তি ছিল এবং তিনি আমাকে না দেখলে হাসিনা কোথায় ছিলেন বলতেন। যুক্তরাজ্যের একজন রানি ছিলেন এতে কোনো সন্দেহ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, রানি কমনওয়েলথেরও একজন নেতা। কমনওয়েলথ দেশগুলোর একজন সদস্য হিসেবে তিনি আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান ছিলেন।

প্রয়াত রানি প্রায় ৭০ বছর ধরে রাজত্ব করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি যে এই বিশ্বের জন্য তিনি শুধু একজন রানিই ছিলেন না, তিনি একজন অত্যন্ত স্নেহময় এবং মাতৃত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বও ছিলেন। যখনই আমি তার সঙ্গে দেখা করেছি, আমি তার মাতৃহৃদয়ের আবেশ অনুভব করেছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close